ক্ষমতায় গেলে ভূতের মতো দেশ চালাবে বিএনপি

যশোরের জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নৌকাকে জনগণের উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করে দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, আবারো নৌকায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে মানুষের সেবা করার সুযোগ দিন। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই এদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দেশে কোনো দরিদ্র ও অশিক্ষিত মানুষ থাকবে না। প্রতিটি ঘর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যারা বাংলাদেশকে সব ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমরা অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব। গতকাল রোববার বিকেলে যশোরের কেন্দ্রীয় ইদগাহ ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী তার ৩২ মিনিটের বক্তব্যে আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের কাজই হচ্ছে খুনখারাপি আর দখল-লুটপাট। হত্যা-খুন-দুর্নীতি, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও ধ্বংস করা তাদের কাজ। ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে তাদের আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রাস্তা করি, তারা রাস্তা কাটে। আমরা গাছ লাগাই, তারা কাটে। বিএনপি-জামায়াত যখনই সুযোগ পায়, মানুষের ওপর অত্যাচার করে। লুটপাট, দুর্নীতি আর মানুষ খুন করে। আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি, নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৪ সালে তারা কী করেছিল।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু কন্যা। দুর্নীতি করতে ক্ষমতায় আসিনি, এসেছি জনগণের কল্যাণ করতে।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে শান্তি-শৃঙ্খলার দেশে পরিণত করবে। একমাত্র আওয়ামী লীগই সেটা পারে। তাই দেশবাসীর প্রতি আহ্বান থাকবে, অতীতে নৌকায় যেমন ভোট দিয়েছেন, তেমনি আবারো আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে নৌকায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ করে দেবেন।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে জনসভাস্থলে পৌঁছুলে লাখো জনতা তুমুল করতালি ও জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে মুখরিত করে তোলে। এটি ছিলো স্মরণকালের বিশাল জনসভা। গোটা জেলা শহরসহ সবগুলো সড়কে ফুল, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি, নৌকার প্রতিকৃতি এবং দুই শতাধিক ছোটবড় সুসজ্জিত তোরণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো হয়।

বিএনপির শাসন আমলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের শাসন আমলের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ সামনের দিকে এগোয়, তারা পেছনের দিকে চলে। ভূতের পা পেছনের দিকে চলে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে চাই। প্রধানমন্ত্রী পঁচাত্তর পর সামরিক স্বৈরশাসকদের দুঃশাসন তুলে ধরে বলেন, ‘জাতির পিতাকে হত্যার পর এ দেশ পরিণত হয়েছিল হত্যা, ক্যু, কারফিউর দেশ। লুটপাটের রাজত্বে কায়েম করা হয়েছিলো। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা কারফিউ জারি করে দেশ চালাতো। জিয়া কারফিউ দিয়ে ভীতিকর পরিবেশে দেশ চালাতেন।’ পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর বিয়োগান্তক হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, জাতির পিতা এদেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। তার চাওয়া-পাওয়া কিংবা হারাবার কিছুই নেই। তার জীবনে একটাই লক্ষ্য এদেশের মানুষের কল্যাণ করা। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ছয় বছর পর দেশে ফিরে এসে তিনি ও তার বোন শেখ রেহানা স্বজন হত্যার বিচার চাইতেও পারেননি। কারণ তারা আইন করেছিল- এই হত্যার বিচার করা যাবে না। তিনি বলেন, আর খালেদা জিয়া খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে তাদের হাতে লাখো শহীদের রক্তভেজা জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সন্ত্রাস-দুর্নীতি-লুটপাট, হত্যা ও অত্যাচার-নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে এবং দেশের সম্পদ গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসে দেশে সন্ত্রাস-দুর্নীতি-জঙ্গিবাদ ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিল। সারাদেশে একই দিনে পাঁচশ জায়গায় বোমা হামলা, বাংলা ভাই সৃষ্টি- এগুলোই করেছে। তিনি বলেন, মানুষ সামনের দিকে এগোয়। আর এরা (বিএনপি-জামায়াত) পেছন দিকে হাঁটে। কথায় আছে ‘ভূতের পা পেছন দিকে চলে’। বিএনপি-জামায়াত জোট অদ্ভুতভাবে ক্ষমতায় আসে। আর ক্ষমতায় এসে ভূতের মতো দেশ চালায়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই ছেলে দেশের মানুষের টাকা মেরে বিদেশে পাচার করেছে। এটা বিদেশি সংস্থার লোক এসে সাক্ষী দিয়ে যায়। ছেলে সিঙ্গাপুরে টাকা পাচার করেছে। সেই টাকা সরকার ফেরত এনেছে। তাদের মা-ও কম নন। খালেদা জিয়া এতিমের নামে টাকা এনে টাকা মেরে খেয়েছেন। যারা এতিমের টাকা মেরে খায়, জনগণের টাকা বিদেশে পাচার করে- তারা আবার কোন মুখে কথা বলে? পদ্মা সেতুর রেললাইন যশোর পর্যন্ত যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে করব, শুরু করেছি। সেতুর রেললাইন যশোর পর্যন্ত সংযোগ করে সেখানে থেকে খুলনা হয়ে মংলা পর্যন্ত যাবে। সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের আমলে বিদ্যুত ক্ষেত্রে সফলতা তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা একবার চিন্তা করুন আমাদের বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতির অভিযোগ দিয়েছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, তখন আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, কোন দুর্নীতি করি নাই, কোন দুর্নীতি হয় নাই। কিন্তু খালেদা জিয়া কি পেরেছে তার বা তার সন্তানের অর্থ আত্মসাত বা মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে? পারেনি। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলম মিলনের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার, আওয়ামী লীগের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ, সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন প্রমুখ।