নতুন বছর জুড়ে থাকবে নির্বাচনী উত্তাপ

স্টাফ রিপোর্টার: নতুন বছর পুরোটাই কাটবে নির্বাচনী উত্তাপ ও নানামুখী আন্দোলনে। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ৬ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন উত্তাপ রাজনৈতিক অঙ্গনে লু হাওয়া ছড়াবে বলে ধারণা করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল।এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির মাঠ দখলের আন্দোলন ও আওয়ামী লীগের তা মোকাবেলা করার প্রস্তুতিতে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা নিয়ে বেশ চিন্তিত সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা। ক্ষমতা পরিবর্তনের এ বছরটিতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা, নৈরাজ্য বা একপাক্ষিক নির্বাচন চান না তারা।

তবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ই হার্ড লাইনে রয়েছে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাচ্ছে না। বিএনপিকে মাঠে নামতে দিতেই নারাজ আওয়ামী লীগ। বিএনপিও চাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে না যেতে এবং যেভাবেই হোক দল গুছিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে তাদের দাবি মানাতে। এ পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী বিএনপিকে মাঠে নেমে প্রচার-প্রচারণা চালানোর জন্য আশীর্বাদ হয়ে সামনে রয়েছে ছয়টি সিটি করপোরেশন। যে নির্বাচনগুলোতে বিএনপি জনগণের ভাবমূর্তি যাচাই করার সুযোগ পাবে। আওয়ামী লীগ বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও পারবে না। ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র উপনির্বাচনকে ঘিরে জমে উঠেছে জাতীয় রাজনীতি। বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় চাচ্ছে নিজেদের মেয়র প্রার্থী নির্বাচিত হোক। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই প্রথম দু মাস এ নির্বাচন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় উত্তপ্ত থাকবে। আর রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে মার্চ থেকে জুলাই মাসের মধ্যে। আর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বছরের শেষ ডিসেম্বরে। তবে আওয়ামী লীগও সব কিছু বিবেচনা করে বছরের শুরু থেকে দেশব্যাপী সফর শুরু করবে। ৮ নির্বাচনী দলকে সফর ও প্রচারণার দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছে। এছাড়া যেকোনো বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যও প্রস্তুত তারা। এদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের রিভিউ আবেদনের রায় নিয়েও বেশ চিন্তিত দলটি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, নির্বাচন উপলক্ষে বছরের পুরো সময় রাজনৈতিক উত্তাপ বিরাজ করবে। নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার পাশাপাশি ও বিএনপির আন্দোলনের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। গত বছর বিএনপির দলের আন্দোলন মোকাবেলা করতে না হলেও এবার বছরের শুরু থেকেই ৫ জানুয়ারি এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে মাঠ গরম করার চেষ্টা চালাবে বিএনপি। সেজন্য ইতোমধ্যে পুরো জানুয়ারি মাসজুড়েই জেলা-মহানগর সংগঠনকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে তারা। আর নির্বাচনের আগে এক-এগারোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে বলে মনে করছে ক্ষতাসীনরা। এজন্য যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে তারা। এছাড়া নির্বাচনী বছরগুলোতে সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করে থাকে। অতীতের সবসময় তা হয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্যও কিছুটা বিব্রত অবস্থায় রয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নতুন বছর রাজনীতির জন্য খুবই টার্নিং একটি বছর। নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযোগী কর্মসূচি নিয়ে বছরের শুরু থেকেই মাঠে নামবে আওয়ামী লীগ। এছাড়া বিরোধী দল বিএনপির যেকোনো আন্দোলন ও নৈরাজ্য কঠোর হাতে দমন করা হবে বলেও জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। সবকিছু মোকাবেলা করেই আগামীতে সরকার গঠন করবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বর্তমান সরকারের আমলেই একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধান পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। বিএনপিকে আন্দোলন না করে নির্বাচনী প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দেন এই নেতা।

এদিকে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনে যেতে চায় না প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে এ বছর কোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপে ভুল করতে চায় না তারা। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে নির্ভুল কৌশলে দলকে চাঙ্গা করে তাদের অনুকূলে পরিবেশ সৃষ্টি করা।

এদিকে সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, বছরটিতে দেশের পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যায় তা এখনই বলা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো যদি সহনশীল না হয় সার্বিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে এবং দেশ পিছিয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ‘ক্ষমতা পরিবর্তনের বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশ ভালো ও অগ্রগতির দিকে যাবে না খারাপের দিকে যাবে তা নির্ভর করছে সম্পূর্ণ রাজনীতিবিদদের উপর। এক সময় দলগুলো সুশীলসমাজের পরামর্শ নিয়ে কর্মকৌশল ঠিক করলেও তারা নিজেরাই এখন অনেক অভিজ্ঞ। আমরা চাই তারা দেশের ভালো হয় এমন সিদ্ধান্তই নেবেন।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বছরটিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। ইসি যদি মেরুদণ্ড সোজা করে কাজ করে তাহলে দেশ ভালোর দিকে যাবে আর তারা যদি রকিব কমিশনের মতো হয় তাহলে দেশের পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে শঙ্কার অবকাশ নেই।