স্কুলে যেতে চায় : জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা

আলমডাঙ্গা জুগিরহুদা গ্রামের চম্পা খাতুন ও তার মেয়ে স্মৃতির ওপর ভাই-ভাবীদের অমানুষিক নির্যাতন : স্মৃতি
স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গা জুগিরহুদা গ্রামের সুরভী আক্তার স্মৃতি এবার জেএসসি পাস করেছে। সে লেখাপড়া শিখে বড় মানুষ হতে চায়। কিন্তু তার নানার পরিবার তা করতে দেবে না। তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। স্কুলে যেতে চায় বলে তাকে দফায় দফায় নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তার মা চম্পা খাতুনও। গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত বই উৎসবে অংশ নিতে পারেনি স্মৃতি। সে স্কুলে যেতে চাইলে তার মামা-মামিরা মিলে বেদম মারপিট করেছেন। পরে চম্পার ছোট্ট টিনের চালা থেকে তাদেরকে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে তারা প্রতিবেশী হেলালের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা বাইরে বের হতে পারছেন না। স্মৃতি স্কুলে যাওয়ার জন্য বাইরে বের হলেই তাকে কেটে ফেলা হবে বলে তার মামা-মামিরা হুমকি দিয়েছেন। এখন কী করবে মা-মেয়ে। তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সময় কাটছে তাদের।
এলাকাসূত্রে জানা গেছে, ৩ কন্যার জননী চম্পা খাতুন স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে তিনি পিতা জুগিরহুদা গ্রামের ফকির বিশ্বাসের বাড়িতে আশ্রয় নেন ২ কন্যাকে সাথে নিয়ে। বড় মেয়ে আগেই বিয়ে হয়েছে। মেজ মেয়ে সুরভী আক্তার স্মৃতি আর ছোট মেয়ে সুবর্ণা খাতুনকে নিয়ে পিতার বাড়িতে ছোট্ট একটা টিনের চালা বানিয়ে আশ্রয় নেন তারা। সম্প্রতি চম্পা খাতুনকে তালাক দেন তার স্বামী। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। চম্পা খাতুন পরের বাড়িতে কাজকর্ম করে দু’মেয়ে নিয়ে কোনো রকম চলেন। মেজ মেয়ে স্মৃতি এ বছর জেএসসি পাস করেছে। ছোট মেয়ে এবার দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। চম্পার ভাই-ভাবিরা সংসার চালানোয় কোনো সাহায্য সহযোগিতা না করলেও সব সময় শাসানি দেন। এরই মধ্যে কয়েকদিন ধরে সন্দেহমূলকভাবে চম্পা ও মেয়ে স্মৃতিকে বিভিন্ন রকম অপবাদ দেন তারা। নাবালিকা স্মৃতিকে জোরপূর্বক বিয়ে দিতে চান তার মামারা। এতে তারা রাজি না হলে তাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসে। কয়েকদিন ধরে তাদেরকে চরমভাবে মারধর করা হয়। এরই মধ্যে গত রোববার জেএসসির ফল বের হলে স্মৃতি সন্তোষজনক ফলাফল করে। এতেই বিপত্তি বাধে। গতকাল সোমবার সে স্কুলে যেতে চাইলে তার মামা শাহীন, রুবেল, মামি রুবি খাতুন ও মালা ছুটে এসে স্মৃতিকে বেপরোয়া মারধর করতে থাকে। তার মা চম্পা বাধা দিতে এলে তাকেও বেদম মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করেন তারা। এ সময় প্রতিবেশী হেলালুল ইসলাম হেলাল হামলাকারীদের নিবৃত করেন। কিছুক্ষণ পরেই টিনের ছাপড়া থেকে চম্পা ও তার দু’মেয়েকে বের করে দেয়া হয়। তারা প্রাণ বাঁচাতে হেলালের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। চম্পা খাতুন অভিযোগ করেন, আমি পরিশ্রম করে খেয়ে না খেয়ে দু’মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছি। কিন্তু আমার ভাই-ভাবিদের তা সহ্য হচ্ছে না। তারা আমার বাপের ভিটে থেকে আমাদের উচ্ছেদ করতে চায়। আমার নাবালিকা মেয়েকে জোরপূর্বক বিয়ে দিতে চায়। এতে রাজি না হওয়ায় আমাদেরকে বিভিন্নভাবে অনৈতিক কাজের অপবাদ দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হচ্ছে। আমার মেয়েকে স্কুলে যেতে দিচ্ছে না। আমি এখন খুবই অসহায়। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। রাস্তায় বের হলেই আমাদেরকে কেটে ফেলবে বলে ভাই-ভাবিরা হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।