হোটেলের ধোঁয়ায় পাশের দোকানি যখন অতিষ্ঠ

তাই বলে গরম তেলের কড়াই উল্টে হোটেল মালিকের স্ত্রীকে ঝলসে দিতে হবে? হোটেলের চুলা থেকে নির্গত ধোঁয়া যতোটাই অসহনীয় হোক না কেন, তাই বলে অতোটা অমানুষ হওয়া চলে না। গ্রাম পর্যায়ে গড়ে ওঠা একটা বাজারের হোটেল, কতোটুকুই আর চলে? যদিও হোটেলের চুলা থেকে নির্গত ধোঁয়া পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা পড়শির বাড়ি ঢুকলে আপত্তি উত্থাপন অমূলক নয়। আপত্তি নিরসনে অবশ্যই অসহনীয় ওই ধোঁয়া ওপরে তুলে দেয়ার চিমনি স্থাপন বাধ্যতামূলক। এই বাধ্যবাধকতা তখনই সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে যখন প্রশাসনের তরফে বিষয়টি জানানোর মতো পদক্ষেপ নেয়া হয়। আইন থাকলেই হয় না, প্রয়োগ প্রয়োজন। আইন প্রয়োগের মাধ্যমেই আইন প্রণয়নের স্বার্থকতা মেলে।
চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি আইলহাস বাজারে পাশাপাশি দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি হোটেল। এই হোটেলের চুলা থেকে নির্গত ধোঁয়া পাশের দোকানে যাওয়ার কারণে সমস্যা দেখা দেয়। দোকানি আপত্তি তুললে শুরু হয় বাগবিত-া। তুমুল ঝগড়ার এক পর্যায়ে হোটেলের সামনের চুলায় চপ-পেঁয়াজু ভাজার গরম তেলের কড়াই উল্টে দেয় পাশের দোকানি। কড়াইয়ের গরম তেলে ঝলসে যান হোটেল মালিকের স্ত্রীর শরীরের মাজা থেকে নিম্নাংশ। গরম তেলে শরীরের চামড়া পুড়ে থকথকে মাংস বের হয়ে আসে। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে গত পরশু। একজন নারীকে ঝলসে দেয়ার মধ্যে যতোটা না বাহাদুরি, তার চেয়ে বেশি পেশিশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পশুত্বই ফুটে উঠেছে। সমাজের সকলে সমান নয় বলেই সচেতনদেরই সহনীয় হয়ে অন্যকেও দায়িত্বশীল হওয়ার মতো মানসিকতা গড়তে সহায়তা করতে হয়। যদিও অসচেতনকে সচেতন করতে গেলে অনেক সময় বিড়ম্বনারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সে কারণে আইনের পথে হাঁটাই উত্তম, আইন প্রয়োগে নিয়োজিতদেরও ন্যায়-অন্যায়ের বিভাজন বুঝে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণন আন্তরিক হতে হয়। অন্যথায় অশান্তি অনিবর্যা হয়ে ওঠার ঝুঁকি বাড়ে। অশান্তি ঝড়ায়।
বাজারে হোটেল স্থাপনের এখতিয়ার যে কারোর আছে, তবে সেই হোটেল চালাতে হবে বিধি মেনে। বিধি ওটাই নিশ্চিতক করে যা অন্যের স্বাধীনতা অক্ষুণœ রাখে। সমাজে শান্তি সম্প্রীতির স্বার্থেই আইন প্রণয়ন ও তার প্রয়োগের যাবতীয় আয়োজন। কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নিলে বিশৃঙ্খলা অনিবার্য হয়ে ওঠে। যেমনটি হয়েছে আলমডাঙ্গার আইলহাস বাজারে। হোটেল ব্যবসায়ীর যেমন ঝগড়ায় লিপ্ত না হয়ে চিমনি স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হতো, তেমনই পাশের দোকানিরও হিংসাত্মক হওয়ার বদলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে অভিযোগ উত্থাপন করে প্রতিকার প্রার্থনা করার সুযোগ ছিলো। অথচ তিনি গরম তেলের কড়াই উল্টে একজনকে ঝলসে দিয়েছেন। বিচার হওয়া দরকার, দরকার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।