ভালো ফলনের কথা বলে চড়া মূল্যে বিক্রি করা আলুবীজে আবাদ বিপর্যয় : ক্ষতিপূরণ দাবি

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার ঘোলদাড়ি বাজারের বিক্রেতার দোকানের সামনে প্রতারিত চাষিদের ধন্না: কৃষি কর্তাদের পরিদর্শন

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার ঘোলদাড়ি এলাকার বহু কৃষক ভালো ফলনের আশায় স্কয়ার সিডের আলুবীজ নিয়ে আবাদ করে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। ফলন ভালো হওয়া তো দূরের কথা বীজে গাছ বেরিয়েছে সামান্য, তাও আবার কুকড়ানো। আলুও ধরেনি তাতে। বিষয়টি জানার পর কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। আলুবীজ বিক্রেতাও মাঠে গিয়ে আলুর আবাদ দেখে হতবাক হয়ে স্কয়ার সিডের ভিত্তিবীজ বিক্রিতে উদ্বুদ্ধ করা আঞ্চলিক বিক্রয় প্রতিনিধির বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ তুলেছেন।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গার ঘোলদাড়ি বাজারের আলু বীজ বিক্রেতা মনোয়ারের কাছ থেকে জাহাপুরসহ এলাকার বিভিন্ন গ্রামের বেশকিছু চাষি আলুবীজ কেনেন। জমিতে রোপণও করেন। অর্ধেক আলুবীজ ফুটলেও তার পাতা কুকড়ানো দেখে মাটি খুড়ে দেখেন যেখানে আলু ধরার কথা সেখানে আলু নেই। আবাদ করে ফলন না পেয়ে চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চাষিদের অভিযোগ, তারা ঘোলদাড়ি বাজারের মনোয়ারের কাছ থেকে আলুবীজ কিনে চাষ করে। আলুবীজে চারা না গজালে বীজের মান নিয়ে সন্দেহ হয়। অথচ ভালো ফলন হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চড়ামূল্যে বীজ বিক্রি করেছে ওই ডিলারসহ স্কয়ারের আঞ্চলিক অফিসার পরিচয়দাতা।
ভুক্তভোগী চাষিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, যেখানে বিএডিসির আলুবীজের দাম সাড়ে ৮শ টাকা, সেখানে ভালো ফলনের কথা বলে ঘোলদাড়ি বাজারের মনোয়ার হোসেন ৪০ কেজির বস্তা প্রতি সাড়ে ১৩শ টাকা দরে স্কয়ারের ভিত্তিবীজ বলে বিক্রি করে বীজ। বেশি ফলনের আশায় স্কয়ার ভিত্তিবীজ রোপণ করে এখন মাথায় হাত। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা ওই আলু ডিলারের কাছে ক্ষতিপূরণের আশায় ধন্না দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহাপুর গ্রামের শামসুল আলমের ছেলে হুসাইন সাড়ে ৩ বিঘা, একই গ্রামের সাবাউদ্দিনের ছেলে ডিটুল ৫ বিঘা, হাসেম শেখের ছেলে নাহিদ ১০ কাঠা, পাইকপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে মানিক মাস্টারের ২ বিঘা, আব্দুল মালেকের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের দেড় বিঘা, মৃত আজিবারের ছেলে সেন্টু মিয়ার ১ বিঘা, মৃত রইচ উদ্দিনের ছেলে আশার ১ বিঘা, সোনাউল্লাহর ছেলে মকফুরের ১০ কাঠা, আনিছুর মালিকের ছেলে আব্দুর রাজ্জাকের ২ বিঘা, মরজেমের ছেলে লাল্টুর ১০ কাঠা ও রহম আলীর ২ বিঘা, স্কয়ার সীডের ডিলার মনোয়ার ও ওহিদুল ইসলাম ১০বিঘা আলু চাষ করে ফলন না পেয়ে অনিশ্চয়তার প্রহর গুণছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কয়ার সিডের ডিলার ঘোলদাড়ি বাজারের হাসিবুল ট্রেডার্স অ্যান্ড বীজ ভা-ারের স্বত্বাধিকারী মনোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা রামপুরার স্কয়ার সিডের এরিয়া ম্যানেজার আশরাফুল হোসেন এলাকার ১০০ চাষিদের নিয়ে মিটিং করেন। আমাকে ডিলার দেখিয়ে নিম্নমানের আলু বীজ চাষিদের মাঝে বিক্রি করে। আমার কাছে থেকে একটি বিলাইং ব্যাংক চেক নেয় ও নগদ ২৫ হাজার টাকা নিয়ে ৩শ বস্তা আলু বীজ দিয়ে যায়। আমিও সম্পূর্ণ বাকিতে আলু বীজ চাষিদের মাঝে বিক্রি করি। এ ব্যাপারে স্কয়ার সিডের এরিয়া ম্যানেজারের সাথে মোবাইলফোনে কথা বলতে চাইলে মোবাইলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
নিম্নমানের আলুবীজে এলাকার চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত সংবাদ পেয়ে গতপরশু বিকেল ৩টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার শায়খুল ইসলাম, সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শ্রী সজল কুমার ব্যানার্জী, নাগদহ ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এবিএম মোমিন অর রশিদ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত আলুচাষিদের সাথে কথা বলেন এবং মাঠ পরিদর্শন করেন। উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার শায়খুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, সরেজমিন ঘুরে দেখেছি মামলা করলে সহযোগিতা করবো ও স্কয়ার সিডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতি পূরণ আদায় করা চেষ্টা করবো।