দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

বছরের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ চলছে। আর তাতে কাঁপন ধরেছে সারা দেশেই। কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে সকালের অনেকটা সময়। ফেরি বন্ধ থাকে মাঝ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত অনেকটা সময়। দিনেও গাড়ি চালাতে হচ্ছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। দুর্ঘটনা ঘটছে, যানজটও দেখা দিচ্ছে। বিমানের ওঠানামাও ব্যাহত হচ্ছে। আবহাওয়া বিভাগের মতে, দেশের ৬ বিভাগে মাঝারি থেকে তীব্র এ শৈত্যপ্রবাহ আরো দুয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। গতকাল শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো চুয়াডাঙ্গায় ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, অর্থাৎ তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। একই তাপমাত্রা ছিলো রাজশাহীতে। এ মাসেই আরও কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহের। তীব্র শৈত্যপ্রবাহও হতে পারে। এরই মধ্যে কয়েকটি এলাকায় কোল্ড ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের দুজনও আলমডাঙ্গায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর আবহাওয়া ক্রমে চরম ভাবাপন্ন হতে পারে। অর্থাৎ শীতে ঠা-া যেমন বেশি পড়তে পারে, আবার গ্রীষ্মে গরমও বেশি পড়তে পারে। ঝড়-ঝঞ্ঝাও বেশি হতে পারে। শীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্র শ্রেণির মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেকেরই থাকার ভালো ঘর নেই। ভাঙা বেড়ার ঘরে শীতের কনকনে বাতাস হু হু করে ঢুকে পড়ে। গরম জামাকাপড়েরও অভাব রয়েছে। সেই সাথে আছে দরিদ্র মানুষের পুষ্টির অভাব ও রক্তাল্পতা। তারাই তীব্র শীতের শিকার হয় বেশি। তাদের রক্ষার কোনো উদ্যোগ আছে কি? চলতি শৈত্যপ্রবাহে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর কোনো উদ্যোগ গতকাল পর্যন্ত খুব একটা দেখা যায়নি। শহরের ভাসমান মানুষও এ সময় অত্যন্ত বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাদের না আছে থাকার ঘর, না আছে গরম জামাকাপড়। এ অবস্থায় দরিদ্র মানুষের সহায়তায় সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসা খুবই জরুরি। আবার অধিক শীতে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ যেসব রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যায়, সেগুলো মোকাবেলায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম দ্রুত হাতে নেয়া প্রয়োজন। বিনা চিকিৎসায় যেন কেউ মারা না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রকৃতির আঘাত আসবেই, তাকে আমরা আটকাতে পারবো না। কিন্তু পরিকল্পিত উদ্যোগ থাকলে ক্ষয়ক্ষতি অবশ্যই আমরা কমিয়ে আনতে পারি। তাৎক্ষণিকভাবে দরিদ্র ও ভাসমান মানুষের জন্য গরম কাপড় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে অতি দরিদ্র মানুষের জন্য স্থায়ী ও মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।