বিভিন্ন স্থানে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত : শীতবস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগে দরিদ্র মানুষ

চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্র রেকর্ড
স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে এখনো শৈত্যপ্রবাহ বইছে। গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা ও রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবারের শীত মরসুমে এখন পর্যন্ত এটি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠা-ায় কাঁপছে সাধারণ মানুষ। জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠা-ায় স্থবির হয়ে পড়েছে এসব অঞ্চলের জনজীবন। প্রতিদিন তাপমাত্রা কমছে। তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষ শীতের কাঁপুনি থেকে রক্ষা পেতে খড়-কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নেয়ার চেষ্টা করছে।
চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহে কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে লোকজন বের হচ্ছে না। তীব্র শীতের কারণে যাত্রী কম থাকায় যান চলাচলও কমে গেছে। শীতে কাজ না থাকায় খেটে খাওয়া মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে এক রকম অসহায় জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। সাধারণ মানুষ শীতের তীব্রতার কারণে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। প্রাণিকূলকে কতোটা শীতে কাঁপতে হচ্ছে তাপমাত্রার রেকর্ড থেকে বোঝা যাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতর চুয়াডাঙ্গা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাদুল ইসলাম বলেন, গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমে আসে। বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের দাপট বাড়ায় কাবু হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গাসহ এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। তীব্র শীতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী। শীতজনিত নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা, জন্ডিস, সর্দি জ্বরে ভুগছে শিশু ও বৃদ্ধরা। ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতের কারণে ফসলের মাঠেও দেখা দিয়েছে বিপর্যয়ের আশঙ্কা। চলতি রবি মরসুমে এ অঞ্চলের মাঠে রয়েছে আলু, পান, ডাল, ভুট্টা, সবজি ও বোরোর বীজতলা। বিশেষ করে মাঠে থাকা আলুর ফসলে লেট ব্রাইট (পচন রোগ) ছড়িয়ে পড়েছে। আর বোরো খেতের বীজতলায় দেখা দিয়েছে কোল্ড ইনজুরি।
শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদফতর চুয়াডাঙ্গা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাদুল ইসলাম বলেন, সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরও নামতে পারে। সে কারণে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেবে। আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়েছ, জানুয়ারিতে একটি মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তীব্র (৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং ২-৩টি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মওসুমি লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলেছে, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলসহ খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকলেও কমবে রাতের তাপমাত্রা। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, জেলায় গত কয়েকদিনে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে হাসপাতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। বড়রা আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে। বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা। শয্যা না পেয়ে অনেকের ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়। শীতজনিত রোগ থেকে বাঁচতে শিশুদের গরমস্থানে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। এদিকে শ্রমজীবী মানুষ কাজের সন্ধানে গিয়ে কাজ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের দিনমুজুর এখলাছ জানান, গত কয়েকদিনের শীতে তাদের আয়েও ভাটা পড়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের হরিণাকু-ুতে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আল-আমিন ট্রাস্টের উদ্যোগে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যশোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহজাহান আলী শিপন। বিশেষ অতিথি ছিলেন আল আমিন ট্রাস্টের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহেদ জোয়ার্দ্দার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শফিউল আলম। অনুষ্ঠানে শীতলি গ্রামের দু’শতাধিক শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।