উপজেলার সংরক্ষিত ১৫শ’ নারী সদস্য পদে চলতি মাসে ভোট

পদ শূন্য ঘোষণা করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ : শিগগির তফসিল ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের ৪৯১টি উপজেলার প্রায় ১৫শ’ সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে উপনির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি জানুয়ারি মাসে এসব পদে ভোটগ্রহণ করার কথা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগামী ২৯ জানুয়ারি ভোটের দিন হিসেবে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। খুব শিগগির স্থানীয়ভাবে অথবা কমিশন থেকে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন ইসির কর্মকর্তারা। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এসব আসন শূন্য ঘোষণা করার পরিপ্রেক্ষিতে ইসি এ নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে। গত ৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের ১৬তম সভায় এ নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা ও ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৫ জুন নারী সদস্য পদে প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইসি সংশ্লিষ্টরা জানান, আগের মতোই এসব আসনে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে বা প্রার্থী হতে পারবেন না। এ নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট উপজেলার এলাকাভুক্ত পৌরসভা (যদি থাকে) ও ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য বা নারী কাউন্সিলররা প্রার্থী ও ভোটার হবেন। নানান কারণে এসব আসন শূন্য হয়েছে। বর্তমান উপজেলা পরিষদগুলোর মেয়াদ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত রয়েছে। এ নির্বাচনে জয়ীরা ওই মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ  বলেন, উপজেলা পরিষদের মহিলা সদস্য পদে ভোট গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। ভোটের সম্ভাব্য তারিখ নথিতে উপস্থাপন করতে কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই নথিতেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন কমিশনাররা।

এদিকে ইসির নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার যুগ্মসচিব (চলতি দায়িত্ব) ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষতি কমিশন সভার কার্যপত্রে জানুয়ারিতেই ভোট গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিধি অনুসারে আগামী ২৯ জানুয়ারি সোমবার ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করে ৪৯১টি উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যদের ১ হাজার ৪৯১টি শূন্যপদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রিটার্নিং অফিসারদের নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে।

উপজেলা পরিষদের ১ হাজার ৪৯১টি সংরক্ষিত নারী সদস্যপদ শূন্যের কারণ সম্পর্কে ইসির কর্মকর্তারা জানান, নানান কারণে ৪৯১টি উপজেলার এসব সংরক্ষিত নারী সদস্যপদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ অনেক নারী সদস্য ২০১৬ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ এবং ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গেছেন। আবার অনেকে চেয়ারম্যান বা অন্যান্য পদে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। আবার কেউ কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। এ ছাড়া কেউ কেউ হয়তো মারা গেছেন বা বহিষ্কৃত হয়েছেন। মূলত এসব কারণে পদগুলো শূন্য হয়েছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তারা বলেন, উপজেলা সংরক্ষিত নারী সদস্য হওয়ার একমাত্র যোগ্যতা পৌরসভা বা ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি পদে বহাল থাকা। নবনির্বাচিত নারী সদস্যদের মেয়াদ সম্পর্কে ইসির কর্মকর্তারা জানান, তাদের মেয়াদ হবে বর্তমান উপজেলা পরিষদের বাকি মেয়াদকাল পর্যন্ত। অর্থাৎ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত। কেন না, উপজেলা পরিষদগুলোয় সাধারণ নির্বাচন হয়েছিলো ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত। উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮-এর ৭ ধারা অনুসারে এসব উপজেলা পরিষদের মেয়াদ (প্রথম সভা থেকে পাঁচ বছর) আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হবে।

কমিশন সভায় অংশ নেয়া যুগ্ম সচিব পর্যায়ের ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, কমিশন সভায় জানুয়ারির মধ্যে ভোট গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদি এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব না হয়, তাহলে মার্চে ভোট গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ আইনের ১৬ (খ) ধারা অনুযায়ী, মহিলা সদস্যপদ শূন্য হলে ওই আসনে ৯০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ গত ১৭ ডিসেম্বর এসব পদ শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ হিসাবে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে ভোট গ্রহণ করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা এবং ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬টি কাউন্সিলর পদে ভোট গ্রহণ হবে। এসব দিক বিবেচনায় রেখে জানুয়ারিতে ভোট গ্রহণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।