ছিন্নমূল দরিদ্রদের জন্য মানবিক সহায়তা জরুরি

প্রকৃতি ও পরিবেশে জেঁকে বসেছে শৈত্যপ্রবাহ। কনকনে ঠাণ্ডায় কাঁপছে সারাদেশ। শীতে যবুথবু দেশের শহর-বন্দর, গ্রামগঞ্জ ও ক্ষেতখামারে কর্মরত মানুষ। হাড়কাঁপুনিতে শীতে কাবু হয়ে পড়েছে পশু-পাখি তথা প্রাণিজগত। শীতের তীব্রতা কতোটা অস্বস্তিদায়ক তা ঘরে বসেও টের পাওয়া যায়।  সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। বিশেষ করে দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের জনপদের জনজীবন হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও শীতের প্রকোপ বেড়েছে। মরসুমে প্রথমবারের মতো সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এমন শীত আর পড়েনি। তাই ছিন্নমূল দরিদ্র মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা জরুরি। প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের সহায়তায় এগিয়ে আসা কর্তব্য। ঋতু বৈচিত্র্যের হিসাব অনুযায়ী এ দেশে শীত নামে ডিসেম্বরের শেষ থেকেই। তবে এ বছর শুরু থেকেই শীতের বৈচিত্র্যহীন ভাব লক্ষ্য করা গেছে। ২৩ থেকে ২৫ নভেম্বর দেশের ওপর দিয়ে শীতল হাওয়া বইয়ে ছিলো। মাঝে দু’দফায় লঘুচাপ এবং নিম্নচাপের প্রভাবে শীত উধাও হয়ে যায়। মধ্য ডিসেম্বর থেকে শীত আছে তো নেই এমন অবস্থা চলছিলো।১ জানুয়ারি থেকে হঠাৎ করেই জেঁকে বসেছে শীত।

শীত শুধু বাংলাদেশকে চেপে ধরেছে তা নয় শীতকালীন ঝড়ে রীতিমতো কাবু হয়ে পড়েছে ইউরোপ ও আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলতি সপ্তাহে আরও শক্তিশালী তুষার ঝড় আঘাত হানবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এ ঝড়কে মার্কিন আবহাওয়াবিদরা ‘বোম্ব সাইক্লোন’ বলে অভিহিত করেছেন। হারিকেনের বেগে বয়ে যাওয়া বাতাসের তোড়ে তুষারে ঢেকে যাবে বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে হাড় হিম করা ঠাণ্ডায় ভুগবে মানুষ। অবশ্য ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ শীতের সাথে সর্বদা যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম।

স্বাভাবিক জীবনযাপনেও পড়েছে শীতের প্রভাব। ঠাণ্ডা জাতীয় রোগ-ব্যাধিতে সংক্রমিত হওয়ার মারাত্মক শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা শিশু ও বয়স্ক মানুষের জন্য ডেকে আনছে বিপদবার্তা। এ সময়টায় গৃহপালিত পশু গরু, ছাগল, ভেড়া ও হাঁস-মুরগি নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শীতে সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখোমুখি হবে মানুষ। সমাজের খেটে খাওয়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও ছিন্নমূল মানুষ মারাত্মক সঙ্কটকাল অতিক্রম করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

ঋতু পরিক্রমায় পৌষ-মাঘ দুইয়ে মিলে শীতকাল। কিন্তু এবার পৌষের মাঝামাঝিতেও ছিলো না শীতের দেখা। ঋতু পরিবর্তনের ধারাবাহিক বাস্তবতায় পাল্টে গেছে এর বৈচিত্র্য। প্রকৃতি বিরুদ্ধাচরণের ফলে অনেক সময় শীতে গরম অনুভূত হচ্ছে আর গরমে জাপটে ধরছে শীত। বর্ষায় নেই প্রকৃত বর্ষা। চৈত্রের ভরদুপুরে নামছে ভারি বর্ষণ-বজ্রপাত। ডুবে যাচ্ছে হাওড়-বাঁওড়, নদীনালা, খাল-বিল। প্রকৃতির বিরূপতার কারণ মনুষ্যসৃষ্ট। সৃষ্টির সেরা এই মানুষই প্রকৃতিকে ক্ষেপিয়ে তুলছে বারবার। যেখানে ছিলো ঘোর বনাঞ্চল সেখানে আজ মানুষের আবাসস্থল। মনুষ্য প্রয়োজনে বনবাদাড় ধ্বংস থেকে শুরু করে নদীনালা, খাল-বিল, পুকুর ভরাট হচ্ছে। প্রকৃতি সহায়ক গভীর অরণ্য চলে যাচ্ছে বাসা-বাড়ির দখলে। নদ-নদী ও ডোবা-নালা দখল করে গড়া হচ্ছে শিল্পাঞ্চল, সুরম্য অট্টালিকা। মানুষ কর্তৃক এসব জোরজবরদস্তি প্রকৃতি সয়ে যাচ্ছে নীরবে। তাই সুযোগ পেলেই প্রকৃতি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠছে। বলা যায়, মনুষ্য আঘাতে জর্জরিত প্রকৃতি যেন আজ নিরুপায়। তাই মানুষকে পাল্টাতে হবে এই প্রকৃতিবিনাশী মনোভাব। প্রকৃতি সহায়ক বন্ধু হিসেবে মানুষ নিজেদের গড়ে তুলবে।