মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ভূমিকা কী?

কোনো সমস্যা, তা যতোই গুরুতর হোক না কেন, যদি স্থায়ী রূপ ধারণ করে, তাহলে একটা সময় তা যেন গা সওয়া ব্যাপারে পরিণত হয়। বাংলাদেশে মাদকাসক্তি তেমনই এক ভয়ঙ্কর সমস্যা, যা সমাধানের তাগিদ আছে বলে মনে হয় না।
তরুণ-যুবকদের বেশ বড় একটা অংশ এই আত্মঘাতি আসক্তির শিকার। তবে মাদকাসক্তি শুধু এ বয়সীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, পূর্ণবয়স্ক, এমনকি শিশু-কিশোরদের মধ্যেও মাদকাসক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তির এলাকাও সীমাবদ্ধ নেই শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম-মফস্বল পর্যন্ত সারাদেশে মাদকাসক্তি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সঠিক পরিসংখ্যান মেলে না। বাংলাদেশে কতো সংখ্যক মানুষ মাদকাসক্ত, এ বিষয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কিংবা সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোকে তারা এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য অনুরোধ করেছিলো, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।
পরিসংখ্যান না থাকা কোনো সামান্য ব্যাপার নয়; এ থেকে বোঝা যায় সমস্যাটি সরকারের কাছে গুরুত্ব পায় কি-না। সংখ্যার হিসাব প্রকাশ পেলে সমস্যাটা যে কতো ব্যাপক, তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতো এবং সমাজে এ বিষয়ে কিছু করার জোরালো তাগিদ সৃষ্টি হতো।
মাদকাসক্তি স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিচারহীনতার কারণে। দেশের অসংখ্য স্থানে প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা চলে। পুলিশের আইজি সম্প্রতি বলেছেন, পুলিশ মাদক নির্মূল করতে পারেনি। আমরা মনে করি নির্মূল করা দূরে থাক, নিয়ন্ত্রণও করতে পারছে না। পুলিশের সদস্য ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের একাংশের সাথে যোগসাজশেই মাদকের ব্যবসা অবাধে চলছে।
অধিকাংশ মাদকদ্রব্য আসে বিদেশ থেকে অবৈধ পথে। আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির সদস্য সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এতো অনায়াসে এতো বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য পাচার হয়ে আসা সম্ভব নয়।
সীমান্তপথে মাদক চোরাচালান ও দেশের ভেতরে মাদকদ্রব্যের কেনাবেচা অত্যন্ত কঠোর হাতে বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে বিজিবি, পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের জবাবদিহি নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। কারণ, তাদের একাংশের সহযোগিতা ছাড়া এই মাত্রায় মাদকের ব্যবসা চলা সম্ভব নয়। মাদকাসক্তি দূর করার জন্য সামাজিক ও পারিবারিক প্রচেষ্টাও খুব জরুরি। প্রতিটি পরিবারের সন্তানদের দিকে দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকা- ইত্যাদি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।