কমেনি শীতের তীব্রতা : জীবননগরে আরও ৫ জনের মৃত্যু

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে শীতার্র্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত
মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: এক চিমটি করে তাপমাত্রা বাড়ছে। তবে শীতের কাঁপ-ধরানো গীত থেমে নেই। হাড়-কাঁপানো শীতে এখনো কাঁপছে দেশের উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চল। চুয়াডাঙ্গা, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, দিনাজপুর, রাজশাহীর পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় শীতের তীব্রতা তুলনামূলক বেশি ছিলো। গতকাল বুধবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো চুয়াডাঙ্গায় ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ জেলার আশপাশে যশোরে ৫ দশমিক ৬, সাতক্ষীরায় ৬ দশমিক ৫, বিভাগীয় শহর খুলনায় ৮ দশমিক ৪ ও কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিলো বলে জানায় আবহাওয়া অধিদফতর।
গত দু’দিনে জীবননগরে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার গোয়লাপাড়ার আলী আহাম্মদ ওরফে খোকা, সন্তোষপুরের আনোয়ার হোসেন, ধান্যখোলার আব্দুল কুদ্দুস, পুরাতন তেঁতুলিয়া গ্রামের বাবর আলী, করিমপুর গ্রামের আবুল কাশেম ও গোয়ালপাড়ার আনোয়ারা খাতুন শীতজনীত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এদের সকলে শীতের মধ্যে অসুস্থতায় ভুগছিলেন বলে তাদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। অসুস্থ এ সকল মানুষ হাঁড় কাঁপানো শীতের কবলে পড়ে কোল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এ নিয়ে চলতি শৈত্যপ্রবাহে এ উপজেলার শীত জনীত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮ জনে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ফরিদপুর, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, শ্রীমঙ্গল, সীতাকু-, কুমিল্লা, ফেনী অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ সারাদেশে অব্যাহত থাকতে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দুপুর পর্যন্ত এই কুয়াশা থাকতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাদুল হক জানিয়েছেন। শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়ার চকপাড়ায় তারা দেবী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত ৮টার দিকে আলুকদিয়ার চকপাড়ায় শীতার্তদের মাঝে শীত বস্ত্র কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন তারা দেবী ফাউন্ডেশনের চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সভাপতি শেখ সেলিম, সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচি, কোষাধ্যাক্ষ পবিত্র কুমার আগরওয়লা, আলুকদিয়া ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মঞ্জুআরা বেগম ও অফিসের নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর কবীর শিপলু।
এদেিক, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা চুয়াডাঙ্গার পক্ষ থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চুয়াডাঙ্গা স্টেশন সংলগ্ন হকপাড়ায় ৪০জন প্রতিবন্ধীদের হাতে প্রধান অতিথি হিসেবে শীতবস্ত্র তুলে দেন পৌর কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মনি। এ সময় তিনি ব্যক্তিগতভাবে কিছু কম্বল দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়াও প্যানেল মেয়র ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হক মুক্তা বেশকিছু কম্বল দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে তিনি জানান। উপস্থিত ছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সেক্রেটারি ফারুক হোসেন ও উপদেষ্টা আব্দুস সামাদসহ সংস্থার সদস্যবৃন্দ।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগরে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত দু’দিনে উপজেলার গোয়লাপাড়ার আলী আহাম্মদ ওরফে খোকা (৬৫), সন্তোষপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৭২), ধান্যখোলা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস (৬৫), পুরাতন তেঁতুলিয়া গ্রামের বাবর আলী (৭৫), করিমপুর গ্রামের আবুল কাশেম (৮০) ও গোয়ালপাড়ার আনোয়ারা খাতুন (৬৫) শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এদের সকলে শীতের মধ্যে অসুস্থতায় ভুগছিলেন বলে তাদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। অসুস্থ এ সকল মানুষ হাঁড় কাঁপানো শীতের কবলে পড়ে কোল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এ নিয়ে চলতি শৈত্যপ্রবাহে এ উপজেলার শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮ জনে।
অপরদিকে, উপজেলার ১৬১ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম রেজা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে এ কম্বল তুলে দেন। কম্বল বিতরণকালে উপজেলা সমবায় অফিসার মোতাহার হোসেন, জীবননগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমা-ার সামসুল আলম ছাত্তার, সাইদুর রহমান, দলিল উদ্দিন দলু, বদর উদ্দিন প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জীবননগর বন্ধু রক্তদান কেন্দ্রের পক্ষ থেকে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতারণ করা হয়েছে। উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গঙ্গাদাসপুর গ্রামে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতারণকালে সংগঠনের উপদেষ্টা জিএ জাহিদুল ইসলাম, এটিএম মাজেদুল ইসলাম মিল্টন, সভাপতি সামিউল ইসলাম অভি, সাধারণ সম্পাদক মিঠুন মাহমুদ ও গঙ্গাদাসপুর যুব সংগঠনের সভাপতি শাহিন কবির এবং সাধারণ সম্পাদক আল মামুন প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে গতকাল শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান তাহাজ্জদ হোসেন প্রায় আড়াই শতাধিক শীতার্ত মানুষের হাতে এদিন শীতবস্ত্র তুলে দেন। ইউনিয়নের সদস্যগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় শীতার্ত দরিদ্রদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছে ঐশিকা সংগঠন। গতকাল দুপুরে ঐশিকার নিজস্ব অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। আলমডাঙ্গা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আবু তালেবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই শীতবস্ত্র প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহাত মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ খান, ডাউকি ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠণিক সম্পাদক আতিয়ার রহমান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবক সিরাজুল ইসলাম, ঐশিকা’র ব্যবস্থাপক আশরাফুল কবীর দুদু মিয়া, সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক, সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সহসভাপতি রুবায়েত বিন আজাদ সুস্থির, সাবেক ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা, কোষাধ্যক্ষ রোকনুজ্জামান, প্রাক্তন সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার রমজান আলী, মির মোহাম্মদ খায়রুল বাশার, ইয়ানুর রহমান, জয়নাল শেখ প্রমুখ।
অন্যদিকে, আলমডাঙ্গার পারকুলা আবাসনের ৪০ ঘর শীতার্ত হতদরিদ্রদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছেন আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহাত মান্নান। গতকাল ১০ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে তিনি পারকুলা আবাসনে উপস্থিত হয়ে স্বহস্তে হতদরিদ্রদের মাঝে এ কম্বল বিতরণ করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম রমেন্দ্র চন্দ্র রায়, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মামুন-অর-রশিদ।
মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ফতেপুর ইউপির উদ্যোগে শীতার্ত পরিবারের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সিরাজের সভাপতিত্বে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত েেথকে কম্বল বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকতা সাইফুল ইসলাম, মহেশপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুর রহমান, ইউপি সচিব আব্দুল খালেক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ৩শ কম্বল বিতরণ করা হয়।