ট্রান্সমিটার পুনঃস্থাপনে চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়া কলোনী ও বেলগাছি ঈদগাপাড়ার সাধারণ মানুষের ভিন্নমত নিয়ে উত্তেজনা : আজ বৈঠক

ভোল্টেজ ওঠা নামায় পুড়েছে বহু বাড়ির টিভি ফ্রিজ : অটো চার্জ দেয়া গ্যারেজের বিদ্যুত সংযোগ বিছিন্ন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়া, কলোনী ও বেলগাছি ঈদগাপাড়ার একাংশের অর্ধশতাধীক বাড়ির টিভি, ফ্রিজ, মোবাইলফোনের চার্জারসহ বহু সংখ্যক বাল্ব পুড়ে নষ্ট হয়েছে। বিদ্যুতের ভোল্টেজ ওঠা-নামা করার এক পর্যায়ে এসব পুড়ে নষ্ট হওয়ার পর ট্রান্সমিটার বিকল হলে ঘটনার কারণ শনাক্ত হয়। বিদ্যুত অফিস থেকে একজন সাব অ্যাসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার লোকবল নিয়ে শেষ পর্যন্ত বেলগাছি মোড়ের অদূরবর্তী ঈদগাপাড়ার অটো চার্জ দেয়ার গ্যারেজের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিছিন্ন করা হয়েছে।
এলাকার ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি পুড়ে নষ্ট হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে পুঞ্জিভূত হয়েছে ক্ষোভ। গতকাল বুধবার ওই অটো চার্জ দেয়া মিঠুর দোকানের পাশে আবারও ট্রান্সমিটার প্রতিস্থাপনের জন্য ওজোপাডিকোর লোকজন গেলে সাধারণ মানুষ বাধা হয়ে দাঁড়ান। তারা বলেন, যে অটো চার্জ দেয়ার গ্যারেজে বিদ্যুত চুরি করার কারণেই ঘটেছে দুর্ঘটনা, পুড়েছে ট্রান্সমিটারসহ এলাকার বহু পরিবারের টিভি, ফ্রিজসহ মূল্যবান মালামাল, সেই চার্জ দেয়া গ্যারেজের নিকট ট্রান্সমিটার প্রতিস্থাপন করতে দেয়নি। গতরাতে এ নিয়ে টান টান উত্তেজনা দানা বাঁধে। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পুলিশও দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। স্থানীয়দের বাধার মুখে ট্রান্সমিটার প্রতিস্থাপন করতে না পারায় বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় স্থানীয়দের নিয়ে বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত দেবেন মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয়রা বলেছেন, বেলগাছি ঈদগাপাড়ার আব্দুল লতিফের ছেলে মিঠু কিছুদিন আগে অটো চার্জের গ্যারেজ আর ওয়েল্ডিঙের দোকান দেয়। প্রতিবেশী মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহমেদ আপত্তি তুলে আবাসিক মহল্লায় ওয়েল্ডিং বন্ধের দাবি জানান। আদালতেও যান তিনি। মিঠু ওয়েল্ডিং বন্ধ করলেও বাণিজ্যিকভাবে অটো রিকশা চার্জ দেয়া শুরু করে। ওই গ্যারেজে চার্জ দেয়ার জন্য যতো অটোর সংখ্যা বাড়তে থাকে, ততোই এলাকায় বিদ্যুতের মান নাজুক হতে থাকে। বিষয়টি প্রথম দিকে স্থানীয়দের তেমন কেউ বুঝে উঠতে পারেননি। গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুতের ওঠা নামা শুরু হলে সন্দেহের তীর ওই অটো চার্জের গ্যারেজের ওপরই পড়ে। মিটার টেম্পারিং করার বিষয়টিও কারো কারো দৃষ্টিগোচর হয়। একপর্যায়ে গতপরশু এলাকার বহু পরিবারের টিভি, ফ্রিজসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি পুড়ে নষ্ট হয়। একইদিন রাতে ওই অটো গ্যারেজের বিদ্যুত মিটারে ধরে আগুন। ওই আগুনের পর থেকেই ট্রান্সমিটারটিও বিকল হয়ে পড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওজোপাডিকো চুয়াডাঙ্গার উপসহকারী প্রকৌশলী সহকর্মীদের সাথে নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং ওই অটোর ব্যাটারি চার্জ দেয়া গ্যারেজের মিটার পোড়ার ধরণ দেখে চমকে ওঠেন। সাথে সাথে বিদ্যুত সংযোগ বিছিন্ন করা হয়। এরপর একই স্থানে ট্রান্সমিটার পুনস্থাপন করতে গেলে স্থানীয়রা চরম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা বলেন, যে অটো গ্যারেজের কারণে এতোবড় বিপদ হয়েছে এলাকাবাসীর, সেই অটো গ্যারেজের নিকট ট্রান্সমিটার স্থাপন করতে দেয়া হবে না।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে গেলে কানে আসে পালনের আকুতি। সে ভাংড়ির দোকানের কর্মচারী। তিল তিল করে টাকা জমিয়ে মাত্র ৭দিন আগে কেনা ১৪ ইঞ্জি রঙিন টিভিটা পুড়ে গেছে। মৃত আমির হোসেনের ছেলে পলান কিছুতেই শান্তনা খুঁজে পাচ্ছে না। বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহমদের বাড়ির টিভি ফ্রিজ সবই পুড়েছে। রবিউলের স্ত্রী হাসিনা, জাহিদুল, তৌহিদ হোসেন, আশনূরসহ এলাকার কমপক্ষে ৫০টি বাড়ির বৈদ্যুতিক অধিকাংশই পুড়েছে। এসবের জন্য ওই অটো চার্জ দেয়ার গ্যারেজই দায়ী বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলে ক্ষোভের আগুনে ফুসতে শুরু করে। গতকাল বুধবার বিকেল থেকে যতোই সময় গড়িয়েছে ততোই পরিস্থিতি অগ্নিমূর্তি ধারণ করতে থাকে। অবশ্য পৌর মেয়র ও পুলিশের দ্রুত ঘটনাস্থলে পরিদর্শনের কারণে উল্লেখযোগ্য অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে উত্তেজনা ছিলো। আজ ট্রান্সমিটার পুনঃস্থাপন নিয়ে ঐক্যমত সৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য অনেকের।