চলমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে

বর্তমান সরকার মেয়াদের পঞ্চম বছরে পা রাখতে যাচ্ছে। চলমান বছরটি নির্বাচনের বছর। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক মহলে নির্বাচনী বাতাস বইতে শুরু করেছে। ফলে সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতার সাথে শেষ বছরে এসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়টি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স রেখে সুশাসন প্রতিষ্ঠার তাগিদ এবার আরও জোরালো। একই সাথে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৪ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংতার পর অনেকটাই নির্বিঘেœই কেটেছে সরকারের। এ সময় ঘরে-বাইরে নানা সঙ্কট মোকাবেলা করতে হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিজয় এসেছে। বিচারের মাধ্যমে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের সাজা কার্যকর হয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর শতভাগ কাজ সম্পন্ন করতে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। সফলতা এসেছে তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষা খাতেও। দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের তালিকায় দশম স্থানে ঠাঁই পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কঠোর ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন হয়েছে। জার্মানিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের (আইপিআরসি) জরিপের তথ্যানুযায়ী, অবকাঠামো উন্নয়ন, জঙ্গি দমন ও আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন হলো বড় সাফল্য। তুলনামূলক বিশ্লেষণে সরকারের সফলতা বেশি, ব্যর্থতা কম। তবে কম হলেও তা গুরুত্বহীন নয়। কিছু ব্যর্থতা সরকারের বিশাল সাফল্যকে ম্লান করে দিয়েছে। হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির পর ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় স্তম্ভিত হয়েছে জাতি। দুর্নীতি দমনেও সরকারের ব্যর্থতা চোখে পড়ার মতো। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ শিক্ষার অধঃগতি এবং বিরোধী দলের কণ্ঠরোধ করাটাও সরকারের ব্যর্থতা মনে করেন বিশ্লেষকরা। গুম-খুন নিয়ে সরকার বারবার বিব্রত হয়েছে। নিখোঁজদের খুঁজে না পাওয়ায় সরকারের ব্যর্থতাও সমালোচিত। তবে কৃষি, শিক্ষা, কূটনীতি, বিদ্যুৎ, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে ঘটেছে সরব বিপ্লব। এ বছর সরকার ৩৫ কোটির বেশি বই বিতরণ করেছে। চার বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৮৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ১৬১০ মার্কিন ডলার। বিশেষজ্ঞ মতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালে মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ২ হাজার মার্কিন ডলারে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। লক্ষ্য ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশে পরিণত হওয়া। নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ এবং ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করেছে জাতিসংঘ। ‘দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ’ রিপোর্টে রাষ্ট্রক্ষমতায় নারীর অবস্থান বিবেচনায় বিশ্বের এক নম্বরে বাংলাদেশের নাম। আবার মানবিক কারণে পার্শ্ববর্তী দেশের লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা এখন ‘বিশ্ব মানবতার জননী।’
অস্বীকার করা যাবে না যে, চার বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দূরত্বের বরফ এতোটুকুও গলেনি। বরং সময়ের ব্যবধানে ক্রমাগত বাড়ছে। যদিও মেয়াদের শেষ বছরে দেশের মানুষ বিগত নির্বাচনের জ্বালাও-পোড়াওয়ের আতঙ্ক ভুলে স্বপ্ন দেখছে সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একই দাবি বিশেষজ্ঞদেরও। সরকারের চার বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। চলমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদায় অভিষিক্ত হতে পারে।