প্রশ্নপত্র ফাঁসের অন্যতম আসামি রাকিবুল হাসানের জামিন

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া আসামি রাকিবুল হাসান জামিন পেয়েছেন। গত মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা জামিন দেন।
ওই আদালতের সরকারি কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল বৃহস্পতিবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আদালত সূত্র বলছে, এ মামলায় এর আগে গ্রেফতার হওয়া চার আসামি জামিনে বেরিয়ে গেছেন। ওই চারজনই গ্রেফতারের পর নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এঁরা হলেন, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাক হোসেন রাফি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুজাউর রহমান সানা, আজিজুল হাকিম ও তানভীর আহমেদ মল্লিক।
সর্বশেষ গত রোববার গভীর রাতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে গ্রেফতর করেন। এই দুজন সিহাব হাসান খান ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ও সালমান এফ রহমান সমাজকল্যাণ বিভাগে পড়েন। তাঁরা ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পেয়েছিলেন। এই নিয়ে এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির দুটি চক্রের মোট ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে ওই দুজন পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। তাঁদের প্রতিজনের কাছ থেকে ৪ লাখ করে টাকা নিয়ে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন হাতে তুলে দিয়েছিলেন নাটোর জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান। রাকিবুলকে ৮ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

সিআইডি সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসের কর্মী সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে প্রশ্ন পান নাটোর ও পাবনা জেলার ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান। এরপর তিনি ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে ২২ জন শিক্ষার্থীকে সাভারের পল্লি বিদ্যুৎ এলাকায় তাঁর বোনের বাড়িতে নিয়ে রাখেন। সেখানেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সমাধান তাঁদের মুখস্থ করানো হয়। ওই ২২ জনের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪ লাখ করে টাকা নিয়েছিলেন রাকিবুল। রোববার গ্রেফতার হওয়া সিহাব ও সালমান ওই ২২ জনের মধ্যে দুজন। ওই দুজন ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে তাঁদের সঙ্গে থাকা ২২ জনের মধ্যে ১৬ জনের নাম সোমবার আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন।

গত ১৯ অক্টোবর রাতে অভিযান চালিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন রানা ও আবদুল্লাহ আল মামুনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরদিন সিআইডির পরিদর্শক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বাদী হয়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন এবং ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে তাঁদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তানজিল, বিকেএসপির সহকারী পরিচালক (বরখাস্ত) অলিপ বিশ্বাস, অলিপের ভাই উৎপল ও জেনিথ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাঁরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য হিসেবে ইলেকট্রনিক ডিভাইস সরবরাহ করেন। এই ডিভাইস নিয়ে হলে ঢুকে পরীক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে প্রশ্নপত্র পাঠান। চক্রের অন্য সদস্যরা দ্রুত উত্তরপত্র তৈরি করে আবার সেসব পরীক্ষার্থীর কাছে সরবরাহ করেন।