চুয়াডাঙ্গায় এক সপ্তাহে কোল্ডস্ট্রোকে ১০ নারীসহ মারা গেছেন ২০ জন

তীব্রশীতে জড়োসড় প্রাণিকুল : ৫ দিনে পাল্টাচ্ছে না পরিস্থিতি
স্টাফ রিপোর্টার: সপ্তাহের অধিক সময় ধরে প্রবাহমান শৈত্যপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের পশ্চিম ও উত্তারাঞ্চলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তীব্র শীতে চুয়াডাঙ্গা প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রবীণদের অনেকেই সকাল-সাজে আগুনের পাশে বসে উষ্ণতা নেয়ার সাথে সাথে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আঞ্চলিক ভাসায় খোসগল্পেও মেতে উঠছেন। তাদের কেউ কেউ বলছেন, ‘এবারের শীতে জড়োসড় হয়ে গেলাম, জাড়কালটা যে যাবে কবে?’ আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী ৫ দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
গতকালও চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় সুর্য্যরে মুখ দেখা গেছে দুপুরে খুব সামান্য সময়ে। শৈত্যপ্রবাহে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে নেমে আসার কারণে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫ বছরের এক শিশু মারা গেছে। এছাড়া গত সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েও বাঁচতে পারেননি ২০ জন নারী-পুরুষ। যাদের অধিকাংশেরই বয়স ৪৫ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার বলেছেন, তীব্র শীতের কারণেই এরা স্টোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসা দিয়েও শেষ পর্যন্ত সুস্থ করা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে গতকালও শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে তারাদেবী ফাউন্ডেশন।
গতকাল বৃহস্পতিবারও চুয়াডাঙ্গায় ছিলো তীব্র শীত। তবে দেশের সবনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে ৬ দশমিক শূন্য ডিগ্রি। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৫ হলেও যশোরের চেয়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কম থাকায় এখানেই শীতের তীব্রতা ছিলো বেশি। রাজশাহী, রংপুর, সৈয়দপুর, দিনাজপুরেও শীতে জনজীবন স্থবির করে তোলে। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মরসুমী লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং দেশের উত্তর পশ্চিমাংশে তা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শ্রীমঙ্গল, কুমিল্লা, ফেনী, সীতাকুন্ড ও হাতিয়া অঞ্চলসহ রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিরাজমান শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বর্ধিত ৫ (পাঁচ) দিনের আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে চিকিৎসাধীন রোগীর মধ্যে ১০ জন নারী ও ১০ জন পুরুষ মারা গেছেন। এরা মাত্রাতিরিক্ত শীতের কারণেই স্টোকে আক্রান্ত হন। হাসপাতালের আরএমও এ বিষয়ে বলেছেন, মাত্রাতিরিক্ত শীতের কারণে রক্ত চালাচল ব্যাহত হয়। কারো মস্তিস্কে কারো হৃদপিণ্ডে রক্ত জমাটও বাঁধে। ফলে তীব্র শীতে সুস্থ থাকতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এছাড়া শীতে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে মোট ১১০ জন। এর মধ্যে শিশুই বেশি। গতকাল ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী ছিলো শিশুসহ ২৭ জন। এছাড়া নিউমনিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর ভিড় বেড়েছে। গতকাল সকাল ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের টেইপুর মিস্ত্রিপাড়ার মিনারুল ইসলামের ৫ বছর বয়সী শিশু সন্তান আবু বক্করকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর দেখে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন দ্রুত রাজশাহী মেডিকেলে নেয়ার পরামর্শ দেন। বিকেলে অ্যাম্বুলেন্সে তুলতেই মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়ে শিশু আবু বক্কর।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, তীব্র শৈতপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় জীবননগরের জনজীবন থমকে গেছে। হাড় কাঁপানো কনকনে ঠাণ্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে এ উপজেলাবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঠাণ্ডা ও শীতজনিত রোগের প্রার্দুভাবে কোল্ড ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিপুল সংখ্যক রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন। ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় দৈনিক পত্রিকা বিলম্বে এ উপজেলার পাঠককূলের হাতে পৌঁছাই।