জীবননগরে চিনি মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেজাল খেজুর গুড়

স্টাফ রিপোর্টার: জীবননগরে ব্যাপকহারে নিম্নমানের ও নোংরা চিনি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভেজাল খেজুর গুড়। এক শ্রেণির অর্থলোভী গুড় উৎপাদনকারী জীবননগরের সুস্বাদু গুড়ের ব্যাপক চাহিদাকে পুঁজি করে খেজুর রসের সাথে চিনি জ্বালিয়ে ভেজাল খেজুর গুড় তৈরি করে তা অবাধে বাজারজাত করছে। এসব চিনি মেশানো ভেজাল গুড় এখন উপজেলার হাটবাজারে সয়লাব হয়ে গেছে এবং এ গুড় চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র। ক্রেতাদের অভিযোগ নিম্নমানের চিনি, পুরাতন চিটাগুড় ও গুড়ের মতো বিশেষ রং দিয়ে এ গুড় তৈরি করা হচ্ছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম হওয়ায় খেজুর গুড়ে চিনি মেশাচ্ছে গাছিরা। গাছিরা ভোরবেলা গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে কড়াইয়ে রসজাল দেবার পর তা লাল বর্ণ হলেই তাতে চিনি ঢেলে দেয়া হয়। চিনিগুলো রসের সাথে মিশে তৈরি হচ্ছে গুড়। এরপর ওই গুড়ে হাইড্রোজ ও ফিটকারি মিশিয়ে গুড়ের রঙ উজ্জ্বল করা হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ৫৫ টাকা। অপরদিকে, প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। প্রতি কেজি চিনি থেকে প্রায় দেড় কেজি গুড় তৈরি হয়। সে হিসেবে চিনি মিশিয়ে চাষিরা প্রতি কেজি গুড়ে প্রায় ৬০ টাকার বেশি লাভ পাচ্ছেন।
একাধিক অভিযোগে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের দফাদার পাড়ার মৃত মতিয়ার রহমানের ছেলে গুড় ব্যবসায়ী রাজামিয়া তার নিজ বাড়িতে ভেজাল গুড় তৈরি করার জন্য মিনি কারখানা করেছেন। তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ২টা অবধি বাড়িতে খেজুর গুড়ের সাথে নিম্নমানের চিনি, পুরাতন চিটাগুড় ও গুড়ের মতো বিশেষ রং দিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করছেন এবং পরদিন সকালে ট্রাকযোগে তা বাজারজাত করছেন। শুধু রাজা মিয়া না, অনন্তপুর গ্রামের মতিয়ার রহমান, মিজানুর রহমান, বাজদিয়া গ্রামের বাদল হুজুরসহ অধিকাংশ ব্যবসায়ী ভেজাল খেজুর গুড় তৈরি করে বাজারজাত করছেন।
উপজেলার দেহাটি গ্রামের গুড় উৎপাদনকারী আ. খালেক বলেন, চিনিকে জ্বাল দিলে তা পরিমাণে অনেক বেড়ে যায়। আর শুধু খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করলে পরিমাণে গুড় কম হয়। সে জন্যই অধিকাংশ গুড় উৎপাদনকারী গাছি খেজুরের রসের সাথে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরিতে ঝুঁকে পড়েছেন। তিনি বলেন, চিনি মিশিয়ে গুড় শক্ত এবং কেমিক্যালের কারণে উজ্জ্বল হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বেশি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, খেজুর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে জ্বাল দিলে সেটি বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। আর এই চিনি মেশানো ভেজাল গুড় দিয়ে কোনো খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে খেলে পেটের পীড়াজনিত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ওই গুড় দিয়ে শিশুদের কোনো খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে শিশুদের লিভার ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, কারো বিরুদ্ধে ভেজাল গুড় তৈরির অভিযোগ পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।