ব্যটারিচালিত অটোরিকশা এবং বিদ্যুত বিড়ম্বনা

প্রযুক্তি পিছিয়ে যেতে নয়, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাওয়ারই পথ দেখায়। মানুষ হয়ে মানুষের সোওয়ার সেকেলে। কালক্রমে কালের গহ্বরে হারায় অনেক কিছু। প্যাডেলে চেপে টানা তিন চাকার রিকশাও সে পথে। তার স্থান নিয়েছে ব্যাটারির শক্তিতে মোটরচালিত রিকশা। যাকে স্থানীয়রা নাম দিয়েছে অটো। এই অটোর মোটর যে বৈদ্যুতিক শক্তি দিয়ে ঘোরানো হয়, তা রিচার্জাবোল ব্যাটারি। অর্থাৎ বিদ্যুত শক্তি ধারণ করে মোটরঘোরায়। শক্তি ফোরালে আবারও বিদ্যুত শক্তির জোগান দিতে হয়। এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদাই শুধু হয়নি, চার্জ দেয়া বহু দোকান গড়ে ওঠার ফলে বহু মহল্লাতেই বিদ্যুতের ভোল্টেজ সমস্যা দিন দিন প্রকটরূপ নিচ্ছে। এরপর যখন কোনো চার্জার দোকানি অবৈধভাবে বিদ্যুত ব্যবহার করে চার্জ দিতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে এবং বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটারই পুড়িয়ে দিচ্ছেন তখন উত্তেজনামূলক নয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ফার্মপাড়া, কলোনি ও বেলগাছ ঈদগাপাড়ার কিছু অংশের বিদ্যুত গ্রাহকদের মাঝে মানসম্পন্ন বিদ্যুত সরবরাহের নিমিত্তে ট্রান্সমিটার স্থাপন করা হয়। ওই ট্রান্সমিটারটি জোড়া খাম্বার নিকট থেকে সরিয়ে এমন একস্থানে স্থাপন করা হয় যার পাশেই রয়েছে অটোচার্জ দেয়ার গ্যারেজ বা দোকান। দিন ও দোকানের খদ্দের বেড়েছে, বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। ট্রান্সমিটারের নিকটস্থ চার্জের দোকানি শুধু বিদ্যুত সংযোগ নেয়ার সময় তার সম্ভাব্য চাহিদা অতিক্রমই করেনি, রাতে মিটার এড়িয়ে বিদ্যুত ব্যবহার করে আসছিলো বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যুত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তার সত্যতা পাওয়ার পর ওই চার্জের দোকানের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এর আগে ওই চার্জের দোকানের কারণে এলাকার অর্ধশতাধিক পরিবারের ফ্রিজ, মোবাইলফোনের চার্জারসহ অনেক কিছুই পুড়ে গেছে। ফলে ক্ষোভ দানা বাঁধে। দাবির প্রেক্ষিতে ওই অটোচার্জের দোকানের পাশে নয়, পূর্বের স্থানেই ট্রান্সমিটার ঘুরিয়ে লাগানো হয়েছে। গতকালই তা লাগানো হয়।
বিদ্যুত প্রযুক্তির এক অবিস্মরণীয় আবিষ্কার। বিদ্যুত ছাড়া স্বাভাবিক জীবনযাপন ভাবাই যায় না। যদিও মানুষ এক সময় বিদ্যুত দূরের কথা আগুনও জ্বালাতে পারতো না। পাথরে পাথর ঘষে, কাঠে কাঠ ঘষে আগুন জ্বালিয়েছে। সেই প্রযুক্তিরই আধুনিক সংস্করণগুলো ভোগ করছে মানুষ। বংশ পরম্পরায় আধুনিক হয়েছে অত্যাধুনিক। প্রযুক্তির আধুনিকায়ন মানুষের জীবনযাত্রা সহজ থেকে সহজতর করে এমন এক পর্যায়ে নিয়েছে যা সত্যিই একসময়ের অসাধ্য। এই অসাধ্যকে সাধ্য করাকে থামিয়ে নয়, বরঞ্চ এগিয়ে নিতে পারাই সুবুদ্ধির পরিচয়। অটো আবিষ্কার হয়েছে, মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজতর করেছে। এই অটোকে টেকাতেই শুধু নয়, আরও আধুনিকায়নই কাম্য। ফলে চার্জ দেয়ার মতো সুব্যবস্থা জরুরি। চার্জ দিতে গিয়ে সাধারণ বিদ্যুত গ্রাহকদের বিদ্যুতের মান হ্রাস যেমন কাম্য নয়, তেমনই কোনো চার্জ দেয়া দোকানির অসাধুত্বের কারণে জনসাধারণের খেসারতও মেনে নেয়া যায় না। সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি চার্জের কারণে বিদ্যুত বিড়ম্বনা দূর করা জরুরি।