গাছ ফেলে দীর্ঘসময় ধরে যানবাহনে ডাকাতি : ক্ষোভ

জীবননগরের সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়িয়া সড়কে আবারও ডাকাতদলের তাণ্ডব

স্টাফ রিপোটার : জীবননগরের সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়িয়া সড়কে ডাকাতদল বেপোরায়া হয়ে উঠেছে। একের পর এক সড়ক ডাকাতির ঘটনায় এলাকাবাসী ডাকাতদলের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ডাকাতদল সড়কে গাছ ফেলে মাইক্রো ও মিশুক গতিরোধ করে এবার মৃত ব্যক্তির স্বজন ও ডাইরিয়া আক্রান্ত শিশু রোগীর পরিবারের সদস্যদের নিকট নগদ টাকাসহ সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেছে। লুটেরার হাত থেকে রক্ষা পাননি জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি রুহুল আমিনসহ ছাদ ঢালাই শ্রমিকও। শুক্রবার রাতে এ ডাকাতির ঘটে বলে জানা গেছে। প্রায় ৪০ মিনিট সড়কে একের পর এক যানবাহন আটকে গণডাকাতির ঘটনা ঘটলেও টইল পুলিশের দেখা মেলেনি বলে ডাকাতির শিকার যাত্রীদের অভিযোগ রয়েছে। ডাকাতির খবর পেয়ে গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কলিমউল্লা (দামুড়হুদা-জীবননগর) ও জীবননগর থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার দেহাটি গ্রাম থেকে একটি রোগী নিয়ে আসা মাইক্রোবাস দেহাটি নিউ ব্রিকস ইটভাটার সামনে পৌঁছুলে সেখানে রাস্তার ওপর বাবলা গাছ পড়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামালে বেশ কয়েকজন মুখোশধারী রোগীর গাড়িটি থামিয়ে তাদের নিকট থেকে মোবাইল ফোন, টাকা ও সোনার গয়না লুট করে। লুটেরাদের কবল থেকে রক্ষা পায়নি জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি রুহুল আমিন ও ছাদ ঢালাই দেয়া শ্রমিক। উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের কয়া গ্রামের বদরুলের ছেলে মিলন, একই ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের সাইফুল, হারুনসহ ৮জনের নিকট থেকে ডাকাতদল ১২হাজার টাকা ও ৮টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।
ডাকাতির কবলে পড়া ঢালাই শ্রমিক মিলন জানান, ঢালাই কাজ শেষ করে তারা পাউয়ার ট্রিলারযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। দেহাটির নিউব্রিক্সের সামনে পৌঁছুলে বেশ কয়েকজন মুখোশ পরিহিত দেশীয় অস্ত্রধারী আমাদেরকে ঘিরে ফেলে ১২ হাজার টাকা ও ৮ মোবাইল ফোন লুটে নেয়। এর পূর্বে তারা একটি মাইক্রোবাসে ডাকাতি করে পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সেখানে পুলিশ এসে পৌঁছুলে বিষয়টি তাদেরকে অবগত করা হয়। এদিকে সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়িয়া সড়কে একের পর ডাকাতির ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয় পড়েছে। তারা সন্ধ্যার পর চলাচল করতে ভয় পাচ্ছে বলে জানিয়েছে।
ঘটনার শিকার যাত্রীর কয়েকজন বলেছেন, জীবননগর উপজেলার নবগঠিত কেডিকে ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের ইসরাইল শাহা ও তার স্ত্রী আবেদা খাতুন ডাইরিয়ায় আক্রান্ত দু’বছরের শিশু সন্তানকে সাথে নিয়ে মিশুকযোগে সন্তোষপুর সড়ক পথ দিয়ে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে দেহাটি নিউ ব্রিক্সের নিকট পৌঁছুলে ৮-১০ জনের ডাকাতদল সড়কে গাছ ফেলে মিশুকটি গতিরোধ করে। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই ডাকাতদল দেশীয় ধারালো অস্ত্রের মুখে মিশুক যাত্রীদের জিম্মি করে নগদ ৭ হাজার টাকা, আবেদা খাতুনসহ সহযাত্রী দু’নারীর নিকট ৩ জোড়া সোনার কানের দুল ডাকাতদল লুট করে নেয়। এ সময় জেলা জামায়াতে ইসলামী দলের সেক্রেটারি রুহুল আমিন তার স্ত্রী স্বপ্না খাতুনকে সাথে নিয়ে সন্তোষপুর সড়ক পথ দিয়ে মাইক্রোযোগে কোটচাঁদপুর উপজেলার সাব্দালপুর ইউনিয়নের লক্ষীকু- গ্রামে মামার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে শোকার্ত পরিবারের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। ডাকাতদল মাইক্রো যাত্রীদের একই কায়দায় দেশীয় ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রহুল আমিনের নিকট ২টি মোবাইল ফোন, নগদ ৩ হাজার টাকা ও তার স্ত্রী স্বপ্না খাতুনের নিকট সোনার ৪টি আংটি, গলার চেইন, কানের দুল, ভ্যানিটি ব্যাগসহ সর্বস্ব লুট করে নেয়। এ সময় আরও কয়েকটি যানবহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। তবে তৎক্ষণাত কার কাছ থেকে কতো টাকা নিয়েছে তা বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়িয়া সড়কে একের পর এক আলোচিত সড়ক ডাকাতির ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কিত জনপদ হিসাবে দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে জীবননগর থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম এবং স্থানীয় এলাকাবাসী ও ইটভাটার কর্মচারীদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছে, এখানে তেমন বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাস্তায় গাছ ফেলে এক ব্যক্তির গাড়ি থামিয়ে তার নিকট থেকে কে বা কারা ৭শ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়েছে। এছাড়া আর তেমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে এখনও পর্যন্ত আসেনি।