মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সাথে শিক্ষকদের বৈঠক, অনশনে অসুস্থ ১৬৫জন
স্টাফ রিপোর্টার: স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের সুস্পষ্ট ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত তারা অনশন ভাঙবেন না। এ অবস্থায় শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। মন্ত্রীর আশ্বাসে তারা ঘরে ফিরে যাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। শিক্ষকরা বলছেন, অনশন করতে গিয়ে মৃত্যু হলেও তারা রাস্তা ছাড়বেন না।
গতকাল রোববার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর সাথে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা বৈঠকের পর এমন অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আলহাজ কাজি রুহুল আমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালে শিক্ষামন্ত্রীকে আমরা বলেছি প্রতিশ্রুতি দিতে। মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি নন। পরে আমরা বলেছি, যদি অর্থ বরাদ্দ না থাকে তাহলে পরবর্তী অর্থ বছর থেকে নিবন্ধন পাওয়া সব ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোকে যাচাই-বাছাই করে ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ গ্রুপে ভাগ করে ধাপে ধাপে জাতীয়করণ করেন। মন্ত্রী এতেও রাজি নন। তখন আমরা মিটিং থেকে বের হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম জাতীয়করণের দাবি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙবো না।
গতকাল রোববার অনশনরত শিক্ষকদের ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে শিক্ষামন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী বৈঠক করেন। বৈঠকে অনশন ভেঙে বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করেন মন্ত্রী। বৈঠকে আন্দোলনরত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকগণের দাবির বিষয়ে আলোচনা হয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চলমান সঙ্কট নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সক্রিয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে। বৈঠককালে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা সচিব আলমগীর ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুর সোয়া ১২টায় প্রথমে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পরিবহন পুল ভবনে মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজি কেরামত আলীর সাথে প্রতিমন্ত্রীর দফতরে সংক্ষিপ্ত বৈঠক শেষে বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর বেলা দেড়টায় মাদরাসা শিক্ষকদের সাথে আরেক দফা বৈঠকে বসেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। এসময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ বৈঠকে যোগ দেন। দুই দফা বৈঠকের পর শিক্ষক সমিতির সম্পাদক শামসুল আলম জানান, শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন দাবি মেনে নেয়ার। তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে দাবির বিষয়টি মেনে নিবেন। কিন্তু আমরা সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ছাড়া অনশন প্রত্যাহার করবো না।
গত ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে আসছেন ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা। পরে ৯ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন তারা। গতকাল রোববার ৬ষ্ঠ দিনে গড়ায় তাদের অনশন। প্রতিনিয়ত শিক্ষকদের উপস্থিতি বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে অসুস্থ শিক্ষকের সংখ্যাও। সব মিলিয়ে গতকাল রোববার পর্যন্ত ১৬৫জন শিক্ষক অসুস্থ হয়েছেন। কেউ কেউ স্যালাইন নিয়েই অনশন করছেন। অসুস্থদের অধিকাংশই অতিরিক্ত শীতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এ ছাড়াও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে ভর্তি আছেন ৮ শিক্ষক। তথ্য অনুযায়ী, মাদনাসা বোর্ডের নিবন্ধন পাওয়া ১০ হাজারের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা রয়েছে। এতে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। মাত্র এক হাজার ৫১৯টি ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান শিক্ষক ২ হাজার ৫০০ টাকা ও সহকারী শিক্ষকরা ২ হাজার ৩০০ টাকা ভাতা পান। বাকি শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছেন।