লাখো কণ্ঠে আল্লাহর রহমত কামনা

আখেরি মোনাজাতে শেষ বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব

স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং দেশ ও মানবতার কল্যাণ কামনায় টঙ্গীর তুরাগ তীরে অশ্রুসিক্ত ও আমিন আমিন ধ্বনিতে গুনা মাফ ও দুনিয়ার কল্যাণ কামনায় শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব। গতকাল রোববার বেলা ১০টা ৪০ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। ৩৫ মিনিটের এ মোনাজাত প্রথমে আরবি ও পরে বাংলা ভাষায় পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ সূরার অন্যতম সদস্য ঢাকার কাকরাইল জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মওলানা মো. যোবায়ের। এবারই প্রথম আরবি এবং বাংলায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।

আখেরি মোনাজাতে গুনা মাফ, সারা দুনিয়ার কল্যাণ কামনা, আল্লাহর নৈকট্য লাভ, দুনিয়া থেকে হানাহানি- মারামারি থেকে রক্ষা, শান্তময় সমাজ ও কল্যাণকর বিশ্ব কামনা করা হয় এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সুখ-শান্তি ও সকল ভেদাভেদ ভুলে ইসলামি ঐক্যের জন্য আল্লাহর দরবারে লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি দু’হাত তুলে আমিন আমিন ধ্বনিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এবার বাংলায় মোনাজাত করায় বাংলা ভাষাভাষি দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা সব বুঝতে পারায় তাদের মন আরও নরম হয়ে যায়। আখেরি মোনাজাতে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্যের এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপনের মধ্যদিয়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানান। এ সময় মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মার গুনা মাফ, শান্তি, কল্যাণ ঐক্য ও উন্নতি-অগ্রগতি কামনা করে বিশ্ব মানবতার জন্য দোয়া করা হয়। এর আগে ভোর থেকে হেদায়েতি বয়ান করেন তাবলিগ জামাতের জ্যেষ্ঠ মুরুব্বিগণ। মুরুব্বিরা নবী করিম (সা.) এর তরিকা মনে করিয়ে দিয়ে গুনাগার বান্দাদের দোয়া কবুল, গুনা মাফ করে জানমাল কোরবানি দেয়ার তৌফিক দান, মুসলমানদের জানমাল হেফাজত, মুসলমানদের দেশকে হেফাজত, ইমানি জিন্দেগি, ইমান আখলাককে কবুল, ইমানের কাজকে মজবুত করা, আল্লাহ ও তার হাবিব (সা.) এর সুন্নতের পথে চলার তৌফিক সম্পর্কে হেদায়েতি বয়ান করেন। বয়ানে নবীর হাওজে কাউসারের পবিত্র পানি পান করার নসিব আমল এবং আমলনামা ডান হাতে দেয়ার ও দ্বীনের পথে চলার ওপর গুরুত্ব দেন।বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফায় তিন দিনব্যাপী বৃহত্তম এ জমায়েতের শেষ দিনে গতকাল রোববার ভোর থেকেই আখেরি মোনাজাতে শামিল হতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইজতেমা ময়দানে আসতে থাকেন। ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, জিপ, কার এবং নৌযানসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে শীত ও কুয়াশা ভেঙে ইজতেমা ময়দানে পৌঁছান এসব মুসল্লি।

গত ১২ জানুয়ারি শুক্রবার শুরু হয় এবারের ইজতেমার প্রথম পর্ব। ঢাকাসহ ১৬ জেলার মুসল্লিদের পাশাপাশি বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের প্রায় ১২ সহস্রাধিক বিদেশি মুসল্লিসহ প্রায় ২০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ১৯ জানুয়ারি এবং শেষ হবে ২১ জানুয়ারি। এতে অংশ নেবেন চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহসহ ১৬ জেলার মুসল্লিগণ।

বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বি ইঞ্জিনিয়ার মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হবে ১১ জানুয়ারি। ১৩ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাত এবং দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ১৮ জানুয়ারি এবং শেষ হবে ২০ জানুয়ারি। গত শুক্রবার রাতে কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ সূরার মুরুব্বিদের এক পরামর্শ সভায় ওই তারিখ নির্ধারণ করা হয়।