শিশু ইছমত আরার রহস্যজনক মৃত্যু : ময়নাতদন্ত হচ্ছে আজ

চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জের যুগিরহুদা মিলপাড়ায় চাতালের কুঁড়েঘরে শিশুর ঝুলন্ত লাশ? পাল্টাপাল্টি অভিমত

স্টাফ রিপোর্টার/সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ভা-ারদহ হাঠাৎপাড়ার নিকটস্থ যুগিরহুদা মিলপাড়ায় ১০ বছর বয়সী শিশুকন্যা ইছমত আরার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনে শিশু ইছমত আরার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে তার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে।
ইছমত আরার পিতাপক্ষ এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও প্রতিবেশীসহ চুয়াডাঙ্গার বেলগাছি মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা শিশু ইছমত আরার দু’মামা এ ঘটনাকে হত্যাকা- বলে অভিযোগ তুলে বলেছেন, ইছমত আরার সৎ মাসহ দাদি ও ফুফুর কাথাবার্তাতেই রহস্য দানা বেঁধেছে। বাড়ির অদূরবর্তী যে চাতাল সংলগ্ন কুঁড়েঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হলো অথচ প্রতিবেশীদের তেমন কেউ দেখলো না। তাছাড়া যেখানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, সেখানে গলায় ফাঁস দেয়া যায় না। পুলিশ সুষ্ঠু তদন্ত করলে চাঞ্চল্যকর তথ্য উন্মোচিত হতে পারে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই সুমন সরকার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে লাশ উদ্ধারের সময় মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, অতোটুকু মেয়ের আত্মহত্যার বিষয়টি মেনে নেয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া আলামতও রহস্যজনক। সে কারণে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ শনাক্তে ময়নাতদন্ত প্রয়োজন। ময়নাতদন্তে জানা যাবে কীভাবে শিশু ইছমত আরার মৃত্যু হয়েছে। তাছাড়া কেনই বা অতোটুকু বয়সের শিশু আত্মহত্যা করবে তারও যুক্তিযুক্ত তেমন কোনো কারণ দেখাতে পারছে না পিতাপক্ষের লোকজন।
ঘটনার বিবরণের প্রকাশ, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ভা-ারদহ হঠাৎপাড়ার অদূরবর্তী যুগিরহুদা মিলপাড়ার ই¯্রাফিল হোসেন একজন বর্গাচাষি। মাঝে মাঝে ভ্যানও চালান। তিনি আনুমানিক ১৫ বছর আগে চুয়াডাঙ্গা শহরতলী বেলগাছি মুসলিমপাড়ার বাবলুর রহমানের মেয়ে মিলি খাতুনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে আসে। ছেলে মিনারুল হোগলডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদরাসার ছাত্র। মেয়ে ইছমত আরা আয়েশা সিদ্দিকী হাফেজিয়া মাদরাসার ছাত্রী। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়লেও গত ডিসেম্বরে বার্ষিক চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়নি সে। গতকাল রোববার সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে পিতারবাড়ির লোকজন বলে শিশু ইছমত আরা মিলপাড়ার কবিরের চাতালের পাশের টিনের ছাপড়ায় গলায় ফাঁস লাগিয়েছে। তাকে সরোজগঞ্জের এক চিকিৎসকের নিকটও নেয়ার চেষ্টা চলে। লাশ বাড়ি রেখে দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। এরই মাঝে খবর পেয়ে ইছমত আরার দু’মামা হাজির হন ভাগ্নির লাশের পাশে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করে ইছমত আরার পিতা পক্ষের লোকজন। সেখান থেকে ফিরে দু’মামা সদর থানায় নালিশ করেন। থানার এসআই সুমন সরকার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মৃত্যুটি রহস্যজনক বলে সন্দেহ করেন। ফলে লাশ উদ্ধার করে সদর হাসাপাতালমর্গে নেন।
ইছমত আরার সৎ মা ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, সকাল হতে না হতে বাড়ি থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে গেলো। পরে খুঁজতে গিয়ে পাওয়া যায় ঝুলন্ত অবস্থায়। সেখান থেকে নামিয়ে প্রথমে সরোজগঞ্জের ডাক্তারের কাছে পরে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা চলে। যখন জানা যায় ইছমত আরা মারা গেছে তখন লাশ বাড়ি নিয়ে রেখে ওর মামাদের খবর দেয়া হয়। ইছমত আরার পিতা ই¯্রাফিল বলেছেন, আমি গরিব মানুষ। প্রথমপক্ষের স্ত্রী মারা গেলে সেই ৪ বছরের মেয়ে মানুষ করছি। সকালে কাজের সন্ধানে বের হতে হয়। কাজে বের হওয়ার পর শুনছি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। ওর উপদৃষ্টির ভাব ছিলো। ইছমত আরার দাদি বলেছেন, সকালে ওর ভাত নিয়ে মাদরাসায় গিয়ে শুনি মাদরাসায় আসেনি। তখন ফিরে খোঁজাখুঁজি শুরু করে ওই কুঁড়েঘরে দেখি গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে ইছমত আরা। অপরদিকে মাদরাসার শিক্ষকদের সাথে যোগযোগ করা হলে তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ইছমত আরা মাদরাসায় আসতো না। মাদরাসায় ওর খোঁজ নিতে রোববার সকালেও কেউ আসেননি। এমনকি তৃতীয় শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষায়ও সে অংশ নেয়নি।
ইছমত আরার মা মিনি খাতুন কিভাবে মারা গিয়েছিলেন? এ প্রশ্নের জবাবেও মিলেছে রহস্যের ছোঁয়া। ‘মিনির এক ভাই বলেছেন, ৫-৬ বছর আগে মিনির স্বামী ই¯্রাফিল বাড়ির উঠোনে বসে গরুর জন্য শানি চোরাচ্ছিলেন। এমন সময় মিনির ওপর রাগ করে ফিড়ে ছুঁড়ে মারে মিনির ওপর। মিনির বুকে লাগে। সেখানেই পড়ে মারা যায় মিনি। পরে আত্মহত্যা বলে চালানো হয়। আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি চূাড়ান্ত করা হলেও শিশু দু’সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত আপস হয়।’ এ বিষয়ে মিনির স্বামী পক্ষের লোকজন বলেছেন, মিনি আত্মহত্যাই করেছিলো। দু’শিশু সন্তানকে দেখভালের জন্য মিনির পিতা দেড় লাখ টাকা নিয়েছিলো। অথচ ওরা দু’সন্তানকে আর দেখেনি। এবারও সেই কৌশলে আবারও হত্যার অভিযোগ তুলে টাকা হাতানোর ফাঁদ পাতছে।
শিশু ইছমত আরার মৃত্যু নিয়ে প্রতিবেশীদের তেমন কেউ প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও অনেকেই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বলেছে, আড়ালে আরও রহস্য লুকিয়ে থেকে থাকতে পারে!