চাকরি দেয়ার নামে টাকা নিয়ে প্রতারণা : পুলিশের খাঁচায় প্রতারক টুটুল

চুয়াডাঙ্গার কেদারগঞ্জে প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের নামে অফিস ভাড়া

স্টাফ রিপোর্টার: রাহাজ্জান টুটুল নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে যশোর কতোয়ালী থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার দেখিয়ে নিয়ে আনে টুটুলকে।
পুলিশ জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কেদারগঞ্জ নতুন বাজারের সীমা ভবনে প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান অফিস ভাড়া নেয়। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন পদে পার্টটাইম ও ফুলটাইম কাজের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে ফিল্ড অফিসার পদে ৬ হাজার, ইউনিট ম্যানেজার পদে ১০ হাজার, ম্যানেজার পদে ১৩ হাজারসহ রিসিপশন ও অফিস সহকারী পদে ভালো বেতনের কথা উল্লেখ করা হয়। চাকরির জন্য আবেদন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলার বেশ কিছু আগ্রহীরা। আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রোটেক্টিভের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক যশোর কতোয়ালী থানার কাশেমপুরের রাহাজ্জান টুটুল, পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুরের এনামুল হক, আবুবকর ছিদ্দিক, একই জেলার সাবদারপুরের মফিজউদ্দিন, কাশেমপুরের ইমরান খান ৩৫ জনকে নিয়োগ দেয়। এ সময় ফিল্ড অফিসার পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছ থেকে ৭ হাজার, ইউনিট ম্যানেজারের কাছ থেকে ১২ হাজার, ম্যানেজারের কাছ থেকে ১৫ হাজার, রিসিপসনের কাছ থেকে ৭ হাজার ও অফিস সহকারীদের কাছ থেকে ৭ হাজার করে টাকা নেয় তারা। এছাড়াও প্রত্যেকের কাছ থেকে আইডি কার্ড বাবদ সাড়ে ৭শ টাকাসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে শুরু করে ১৫ দিনের ট্রেনিং। ট্রেনিঙে অর্ধেক মাসের বেতন দেয়ার কথা থাকলেও না দিয়ে শুরু করে টালবাহানা। এছাড়াও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিট ম্যানেজার পদে ৮ জনের স্থানে নিয়োগ দেয়া হয় ২৩ জনকে। এতেই চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের মাঝে সন্দেহের দানা বাধতে শুরু করে। নিয়োগপ্রাপ্ত এক কলেজছাত্রের সন্দেহ তীব্র হওয়ায় প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের ওয়েবসাইটে ঢুকে জানতে পারেন চুয়াডাঙ্গায় এই কোম্পানির কোনো শাখা নেই। এরপরই বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রাপ্ত ছেলে-মেয়ের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের চুয়াডাঙ্গায় কোনো শাখা নেই। একপর্যায়ে গত সোমবার নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীরা রাহাজ্জান টুটুলের কাছে গিয়ে টাকা ফেরত চাই। এ সময় টুটুল স্বীকার করে টাকা পরিশোধ করার আশ্বাস দেন। তার পরিবারের লোকজনও টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। একই বিষয়টি প্রশাসনকে না জানানোর জন্য অনুরোধ করে। টাকা না দেয়া পযর্ন্ত অফিসেই টুটুলের কাছে অবস্থান নেয় নিয়োগ প্রাপ্তরা। ওইদিন রাতেই অফিসের দরজা নক করেন একদল যুবক। এ সময় তারা নিজেদেরকে যশোর থানার পুলিশ পরিচয় দেয়। দরজা খুললে অফিসে অবস্থানকারীদের মারধর করে টুটুলকে নিয়ে যায়।
পরেরদিন গতপরশু মঙ্গলবার আহত কর্মচারীসহ সকলে টাকা ফেরতের আশায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের দারস্ত হন। এ সময় জেলা প্রশাসক পুলিশ সুপারের নিকট পাঠান। পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন বিষয়টি শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এক পর্যায়ে যাশোর জেলার কাশিমপুর গ্রামের মন্টু মোল্লার ছেলে রাহাজ্জান টুটুলকে গত মঙ্গলবার রাতেই যশোর কোতায়ালী থানা পুলিশ তাকে আটক করে। এই খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ গতকাল বুধবার তাকে চুয়াডাঙ্গা থানাই নিয়ে আটক করে রেখেছে। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ জানান আজ তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।