সেচ ক্যানেলে এক ফোঁটা পানি নেই : বড় ধরনের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা

?

বোরো ধান রোপণমরসুম শেষ হতে চললেও আলমডাঙ্গার জিকে

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: বোরোধান রোপণের মরসুম শেষ হতে চললেও আলমডাঙ্গার জিকে ক্যানেলে এক ফোঁটা পানি নেই। সেচ প্রকল্পের মেইন ক্যানেলের শূণ্য বুকজুড়ে উঠেছে হাহাকার। পানির অভাবে আলমডাঙ্গার জিকে সেচ প্রকল্পের আওতাধীন বেশিরভাগ কৃষকরা এখনও বোরোধান রোপণ করতে পারেননি। আদিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ধানক্ষেতের ফসলি জমিন এখন পরিণত হয়েছে গোচারণভূমিতে। বিলম্বে বোরোধান রোপণের কারণে উপজেলার জিকে সেচ প্রকল্পের আওতাধীন ৬৫ হাজার ৯শ’ আড়াই বিঘাসহ চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলার কয়েক লাখ হেক্টর জমির বোরো ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৬৫ হাজার ৯শ’ বিঘার অধিক ফসলি জমি জিকে সেচ প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার কয়েক লাখ হেক্টর কৃষি জমি জিকে অর্থাৎ গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত। পানি উন্নয়ন বোর্ড এ বছর সময়মতো সেচের পানি সরবরাহ না করায় বিপাকে পড়েছেন উপজেলার কয়েক হাজারসহ তিন জেলার কয়েক লাখ কৃষক। পানির অভাবে বোরোধান রোপণ করতে পারছেন না তারা। একদিকে বীজতলায় চারার বয়স বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে বোরো রোপণের প্রকৃত সময় ইতোমধ্যেই অতিবাহিত হয়ে গেছে। কৃষিবীদদের মতে, উৎকৃষ্ট ফলন পেতে হলে অবশ্যই জানুয়ারি মাসের ভেতর বোরোধান রোপণ করা জরুরি। জানুয়ারির ১৫-২০ দিনের মধ্যে রোপণ করলেই বেশি ভালো।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল আজিজ বলেন, অন্যান্য ব্যবসার মতো কৃষিও একটা ব্যবসা। এখানে বিনিয়োগের বিপরীতে লাভ-ক্ষতির হিসেব থেকেই যায়। স্মরণ রাখতে হবে এটা সময় আর আবহাওয়ার সাথে সম্পৃক্ত। জানুয়ারি মাস শেষ হলেও আলমডাঙ্গা উপজেলাসহ তিন জেলার কৃষকরা সেচের পানির অভাবে বোরো ধান রোপণ করতে পারেননি। খুবই অল্প সংখ্যক কৃষক ডিপ টিউবওয়েল বা শ্যালোমেশিনের সাহায্যে সেচ দিয়ে ধানের চারা রোপণ করেছেন। তবে জিকে সেচ প্রকল্পের আওতাধীন জমিতে শ্যালোমেশিনের সাহায্যে সেচ দেবার ব্যবস্থা সাধারণত নেই। ফলে প্রায় সকল কৃষকই আজ অবধি ওয়াবদা’র দিকে তাকিয়ে আছেন। তবে কেউ জানেন না ঠিক কবে নাগাদ তাদের জমিতে সেচের পানি পৌঁছুবে। আদৌ ধান রোপণ করতে পারবেন কি না, সেটা নিয়েও চরম সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
আলমডাঙ্গার বেলগাছি গ্রামের কৃষক ইউনুস ম-ল বলেন, গরমের সময় চলে এসেছে। তারপরও পানির অভাবে তিনি ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না। কেদারনগর গ্রামের কৃষক রায়হান উদ্দীন বলেন, বীজতলাতেই তার বীজ বুড়ো হয়ে গেলো বলে আক্ষেপ করেছেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ একেএম হাসিবুল ইসলাম বলেন, দেরিতে রোপণের ফলে বীজতলাতেই চারা বয়ষ্ক হয়ে পড়ে। ওই বয়ষ্ক চারা জমিতে রোপণের পর রোগব্যাধিতে বেশি আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে। অপরিণত ধানক্ষেতে থোড় দেখা দেয়। উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। অথচ ফলন কমে যাবে। সেচের অভাবে বিলম্বে বোরো ধান রোপণের ফলে আলমডাঙ্গা উপজেলায় ফলনের ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া দেরিতে ধান ঘরে তোলার ক্ষেত্রে ঝড়, শিলাবৃষ্টির মতো অনাকাঙ্খিত প্রাকৃতিক দূর্যোগের আশঙ্কা থেকে যায়।
কেনো পানি উন্নয়ন বোর্ড এবার সময়মত জিকে ক্যানেলগুলিতে সেচের পানি দিতে বিলম্ব করছে? এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও নির্দিষ্ট করে কোনো জবাব দিতে পারেননি। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই পানি পাওয়া যাবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক অফিসের নির্বাহি প্রকৌশলি আরিফুজ্জামান খান প্রশ্নটা পাশ কাঁটিয়ে চুয়াডাঙ্গা অফিসের সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন। চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলি অপূর্ব কুমার ভৌমিকের সাথে গত বৃহস্পতিবার রাতে বার বার মোবাইলফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি তা রেসপন্স করেননি।
তবে চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপপ্রকৌশলি (সম্প্রসারণ) হাফিজ উদ্দীন জানিয়েছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজি নির্দেশ দিয়েছিলেন ১৫ জানুয়ারির মধ্যে পানি উত্তোলনের পাম্প চালু করতে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। পদ্মা নদী থেকে সেচপাম্প অবধি পলি পড়েছে। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৮৫০ মিটার পলি জমলেও এবার প্রায় ১৬ মিটার পর্যন্ত পলি জমেছে। সে কারণে দেরি হচ্ছে। তাছাড়া চলছে পাম্প মেরামত কাজ। এই সপ্তার মধ্যে জিকে ক্যানেলে পানি দেয়া হবে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি ওয়াকিবহাল সূত্র জানিয়েছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিলো ফসলি জমিতে সময়মত সেচের পানি সরবরাহ করা। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তারা সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে যে কাজে টাকা আছে সেসব প্রকল্প নিয়ে বেশি ব্যস্ত। ফলে বৃহত্তর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসিনতায় ফসলের ফলন বিপর্যয়ের মতো ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে আজ কৃষকরা।