অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া : নতুন মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগ নিরুত্সাহিত হবে

স্টাফ রিপোর্টার: নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাংক ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। আর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে যে পরিমাণ ঋণ গেছে লক্ষ্যমাত্রা তার চেয়ে কমিয়ে ধরা হয়েছে। চলতি বছরের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচনী বছরে বিনিয়োগ স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। তার ওপরে শিল্পের জন্য গ্যাস বিদ্যুত সমস্যা তো নিত্যসঙ্গী হয়ে আছেই। আর ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময়হারও সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। এসব কারণ বিবেচনা করে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঋণের ক্ষেত্রে যেভাবে সতর্কতা নিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে বিনিয়োগ কমে যেতে পারে।

চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, বিনিয়োগ ও উত্পাদন কর্মকাণ্ডে প্রবৃদ্ধি গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে অভ্যন্তরীণ ঋণের যোগান প্রবৃদ্ধিতে সংকোচন না এনে আগেকার ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ মাত্রায় অপরিবর্তিত রাখা হবে। যা অনধিক ছয়   শতাংশ মূল্যস্ফীতিতেও দেশজ উত্পাদনে প্রকৃত প্রবৃদ্ধির ৭ দশমিক ৪ শতাংশ সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত হবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারের অতীতের ভুলের কারণে ব্যাংক ঋণর সুদের হার বাড়বে। সরকার ব্যাংকিং খাতকে অবহেলা করেছে। ব্যাংকিং খাতে ঋণ খেলাপি বেড়েছে ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ অনেক বেড়েছে। অন্যদিকে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ঘাটতি প্রতি মাসে বাড়ছে। ডলারের দামও বেড়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি বেশি নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে তা ক্ষতিকারক হবে। এজন্য বাজারের ওপরই তা ছেড়ে দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন মুদ্রানীতিতে দেয়া নির্দেশনার কারণে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে নিরুত্সাহিত হবে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোর জন্য কোনো সুখবর নেই।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগের মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৬ দশমিক দুই শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে তা বাড়িয়ে ১৬ দশমিক আট করা হয়েছে। এটা ভালো দিক। তবে সামনের দিনগুলোতে ব্যাংক ঋণে সুদের হার বেড়ে যাবে। যেটা ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই উদ্বেগের দিক। তিনি বলেন, ঋণে সুদের হার বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়, বিনিয়োগ কমে যায়, ব্যবসা পরিচালনার খরচও বেড়ে যায়। এজন্য আগামীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় তদারকি করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। নির্বাচনী বছর বিষয়ে তিনি বলেন, এখন রাজনীতির গুণগতমান পরিবর্তন হয়েছে। নির্বাচনী বছর হওয়ার পরও ব্যবসা যাতে ভালোভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য রাজনীতিবিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, নতুন মুদ্রানীতি খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বাড়াবে। প্রবৃদ্ধির সুফল সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ব্যাংকিং খাত সুদৃঢ়করণ ও প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করার মতো পরিকল্পনা ঘোষিত মুদ্রানীতিতে দেখা যাচ্ছে না। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গবেষণাকেন্দ্রিকও করা হয়নি। এমনকি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে মনে হয় উপেক্ষাই করা হয়েছে। নির্বাচনের বছর হলেও সে বিষয়টি মাথায় রাখা হয়নি। এমনকি ঘোষিত মুদ্রানীতির সঠিক বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনাও নেই। এতে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের সাহস দেখাবেন না।

প্রসঙ্গত, আগের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপিত ১৬ দশমিক ২ শতাংশ মাত্রা অতিক্রম করে ডিসেম্বর ২০১৭ শেষে ১৮ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। নতুন মুদ্রানীতিতে এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবির বলেছেন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে  গেছে। তাই এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমানো উচিত। আর ঋণ কমানোর জন্য ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত যৌক্তিকীকরণ করা হবে বলে জানান তিনি। বর্তমানে কনভেনশনার ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত (এডি রেশিও) ৮৫ শতাংশ আর ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ রয়েছে। শিগগিরই এ হার কমানোর বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তবে আগামী জুনের মধ্যে ওই কমানো এডি রেশিও সমন্বয় করতে হবে বলে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির।