চিকিৎসাসেবা খাতে বাণিজ্যিকীকরণের প্রবণতা প্রকট

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা রাষ্ট্রের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। কিন্তু এর কোনোটিই পরিপূর্ণভাবে ভোগ করতে পারছে না এদেশের কোনো নাগরিক। শিক্ষাখাত নিয়ে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি কারো অজানা নয়। মাথার ওপর একটি ছাদের স্বপ্নও অনেকের জন্য অলীক কল্পনা মাত্র। ন্যূনতম পোশাকের নিশ্চয়তাও সবার নেই। একইভাবে চিকিৎসা একটি সেবামূলক পেশা হলেও এখন তা বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে স্বাস্থ্য খাত। গতকাল শুক্রবার দৈনিক মাথাভাঙ্গায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চুয়াডাঙ্গার ডায়াগনস্টিক ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবাদান কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশেই সরকারি বিধি অবজ্ঞা। শুধু চুয়াডাঙ্গা শহরেই না প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেখানে চরম অরাজকতা, অব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাচারিতায় জিম্মি অধিকাংশ মানুষ। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েও এ বিষয়ে কারো কাছে অভিযোগ করার কোনো উপায় নেই। সামর্থ্যবানরা দেশের বাইরে গিয়ে স্বাস্থ্য চিকিৎসা করালেও যাদের সেই সামর্থ্য নেই তাদের বাধ্য হতে হয় এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে। কিন্তু অধিকাংশ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র মোটাঅঙ্কের অর্থ ছাড়া কোনো ধরনের সেবাই দেয় না। এমন কি অর্থের বিনিময়েও অনেক সময় সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যায় না। কারণ যারা এসব কেন্দ্র তৈরি করেছেন তারা চিকিৎসা প্রদানকে সেবা নয় বাণিজ্য হিসেবেই গ্রহণ করেছেন। দেশের বেসরকারি চিকিৎসাসেবা খাতে বাণিজ্যিকীকরণের প্রবণতা প্রকট। বেসরকারি চিকিৎসাসেবায় সরকারের যথাযথ মনোযোগের ঘাটতি রয়েছে। এতে করে একদিকে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে কিছু ব্যক্তির এ খাত থেকে বিধিবহির্ভূত সুযোগ-সুবিধা আদায়ের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা কিংবা আইন না থাকায় রোগীর অবহেলা হলে ও ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা গেলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ করার কোনো জায়গা নেই। বরং এ ধরনের পরিস্থিতিতে রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকদের মধ্যে বাকবিত-া ও হাতাহাতির ঘটনাই আমরা বেশি দেখি। পরবর্তীতে চিকিৎসকদের ধর্মঘট রোগীদের আরও বিপদসঙ্কুল অবস্থায় ফেলে দেয়। বেসরকারি চিকিৎসা খাত সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি পর্যালোচনা, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, এসব প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসাসেবা, বেসরকারি চিকিৎসাসেবার বিপণন ব্যবস্থা, তথ্যের স্বচ্ছতা, তদারকির বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তৈরি এই গবেষণা প্রতিবেদন চিকিৎসা খাতের যে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে তা এক কথায় উদ্বেগজনক। এতে সামর্থ্যবান রোগীরা যেমন দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে তেমনি তুলনামূলক কম সামর্থবানরা দিনে দিনে আস্থা হারাচ্ছে। সে সঙ্গে দেশীয় অর্থও দেশের বাইরে ব্যয়িত হচ্ছে। এটি নিশ্চয়ই বিবেচনায় রাখা দরকার।