প্রশ্নপত্র ফাঁস জাতিকে পঙ্গুত্ব করছে

বন্ধ হচ্ছে না এসএসপি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস। বাংলা ও ইংরেজির পর শনিবার ফাঁস হলো গণিতের প্রশ্নপত্রও। পরীক্ষার দেড় ঘণ্টা আগে প্রশ্ন পাওয়া গেছে ফেসবুক থেকে সোশাল গণমাধ্যমে। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে জাতিকে পঙ্গুত্বের পথে ঠেলে দেয়া হলেও, বাস্তবতা হলো কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না এ অনৈতিক প্রবণতা। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কঠোরতার মধ্যেও চলতি এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেছে। যেদিনই পরীক্ষা হচ্ছে, সেদিনই পরীক্ষা শুরুর আগে ফাঁস হচ্ছে প্রশ্নপত্র। গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত অঙ্ক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ সবমহলে উদ্বেগের অন্ত নেই। রাজশাহীতে এক পরীক্ষার্থীর মাকে প্রশ্নসহ আটক করেছে পুলিশ। ফরিদপুরে ৪ জন স্কুলশিক্ষক এবং বগুড়ায় একজন মাদরাসা শিক্ষক পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার সময় হাতেনাতে আটক হয়েছেন। ফেসবুকে প্রশ্ন শেয়ার করার সময় হাতেনাতে আটক হয়েছেন মাদারীপুরে। জামালপুরে ১০ পরীক্ষার্থীও আটক হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শনিবার সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপে দেয়া হয় গণিতের বহুনির্বাচনী ‘খ’ সেট ‘চাঁপা’ নামের প্রশ্নপত্রের উত্তরসহ ছবি। পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার প্রশ্নের সাথে তা হুবহু মিলে যায়।
লক্ষ্য করা গেছে, পিইসি-জেএসসি, এসএসসি-এইচএসসি, বিভিন্ন চাকরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এবং প্রাথমিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এবার এসএসসি পরীক্ষায় ধারাবাহিকভাবেই ফাঁসের ঘটনা ঘটে চলেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নিঃসন্দেহে জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো একটি দুষ্কর্ম দীর্ঘদিন ধরে সংঘটিত হলেও বক্তৃতা-বিবৃতি ছাড়া কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে আর কোনো দায় আছে বলে মনে হচ্ছে না। রীতিমতো সিন্ডিকেট গঠন করে দুষ্কৃতীরা একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটাচ্ছে। যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কথায় আছে- চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি না পড়ে ধরা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় প্রায় ক্ষেত্রেই ধরা না পড়ার বন্দোবস্তও পাকা করে রাখে চোরের দল। বস্তুত প্রশাসনের একটি অসাধু চক্রকে ‘ম্যানেজ’ করে কিংবা ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনকে সম্পৃক্ত করে এসব অপকর্ম করা হয়। প্রশাসনযন্ত্র ও রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিয়ম মেনে চলতে ও আইন প্রতিপালনে আন্তরিক না হয়, তাহলে কোনোদিনও দেশ থেকে এহেন নৈরাজ্য দূর হতে পারে না। সম্প্রতি প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িতদের পুলিশ গ্রেফতার করছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণাসহ বেশ কিছু উদ্যোগ রয়েছে সরকার তথা সংশ্লিষ্টদের। এরপরও চলতি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছেই। আগের পরীক্ষার মতো অঙ্ক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে। দুষ্কৃতকারীরা এবার প্রশ্নফাঁসের ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে বলে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পর্যালোচনা কমিটির ভাষ্যে ওঠে এসেছে। এবার পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্তে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে পরীক্ষার্থীরা খুব একটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না- সংশ্লিষ্টরা এমন দাবি করেছেন। এ প্রক্রিয়ায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে সরকারকে কোনো গোষ্ঠী বিব্রত করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে কি-না, সে বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা সমীচীন। সরকারের এতো কঠোরতা সত্ত্বেও দুষ্কৃতকারী এ চক্রটি পার পেয়ে যাবে তা হতে পারে না।
সার্বিকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে বেকারত্বের যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে থাকা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নিরীহ ও সৎ চাকরিপ্রার্থীদের সাথে যেমন তামাশা করা হচ্ছে, তেমনি কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সব স্তরের শিক্ষার্থীদের মেধা ও সৃজনশীলতা ধ্বংসের বন্দোবস্তও যে পাকা করা হচ্ছে, সে বিষয়ে আর দ্বিমতের সুযোগ নেই।