হয়রানি বন্ধে কর্তাদের দায়িত্বশীল হওয়া দরকার

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট-সংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণার এক সপ্তাহেরও বেশি আগে থেকে সারাদেশে যে পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়েছিলো, তাতে শুধু বিএনপি-জামায়াত ও তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরাই আটক হননি, অনেক নিরীহ সাধারণ মানুষও পুলিশের অমানবিক দুর্ব্যবহার ও অন্যায় হেনস্তার শিকার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দৃশ্যতো ভুলে গিয়েছিলো যে রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব নাগরিকের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার সংবিধানসম্মত অধিকার অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে নারী-পুরুষকে গণহারে ধরে নিয়ে থানায় আটকে রাখায় দায়িত্বশীলতার প্রকাশ ঘটেনি, ব্যক্তি-নাগরিকের মানবিক মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা তো নয়ই। ৩০ জানুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার দিন পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশজুড়ে প্রায় তিন হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে। এটা পুলিশের দেয়া হিসাব, বিএনপি দাবি করেছে তাদের সাড়ে তিন হাজার নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, আটক ব্যক্তিরা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী। কিন্তু এই দাবি সঠিক নয়, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে অনেক নিরীহ সাধারণ মানুষ আছেন, যাদের কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে স¤পৃক্ততা নেই।
পুলিশের এ গণআটকাভিযান সম্পর্কে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া এ রকম, ‘মন চাইলো, ধরে নিয়ে গেলো।’ আইনের শাসনের ভিত্তিতে পরিচালিত কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে পুলিশ সাধারণ মানুষকে এভাবে হেনস্তা করতে পারে না। সুনির্দিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে নাশকতা বা অন্য কোনো অপরাধের প্রস্ততিকালে কাউকে আটক বা গ্রেফতার করার অধিকার পুলিশের আছে। কিন্তু মনগড়া সন্দেহের বশে গণহারে হারে আটক করার অধিকার নেই। পুলিশ বাহিনী এ ধরনের গণআটক ও গণহেনস্তার প্রবণতা ত্যাগ করে নাগরিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে যথাযথ আইনি পন্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট হওয়া দরকার। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে বোধোদ্বয় প্রয়োজন।