ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে চাষযোগ্য জমি

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এখনো দেশের উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাদের শ্রম ও ঘামে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে উন্নীত হয়েছে। তবে শঙ্কার কথা, দিনে দিনে কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। অধিক জনসংখ্যার আবাসন সমস্যা নিরসনে যেমন কৃষি জমি ব্যবহৃত হচ্ছে তেমনি সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, ইটভাটা এবং শিল্প কল-কারখানা তৈরি এবং প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যুদের দখলদারিত্বের কারণে কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে এক সময় দেশের মানুষের চাহিদা এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অপার সম্ভাবনার এ খাতটি ঝুঁকির মুখে পড়তে বাধ্য হবে। তাই সময় থাকতেই সতর্ক উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
প্রতি বছর এমন অপরিকল্পিত উন্নয়নে অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে প্রায় ৬৮ হাজার হেক্টর আবাদি জমি। এক্ষেত্রে সরকারেরও প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। ভবিষ্যতে জনচাপ আরও বাড়বে। এমতাবস্থায় বাড়বে খাদ্যের চাহিদাও। স্বাধীনতার সাড়ে ৪ দশক পরও আমাদের দেশে জমির সুষম ব্যবহারের জন্য আইনানুগ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে ফসলের মাঠে হচ্ছে শিল্প আর শিল্পের জায়গায় হচ্ছে আবাসন। এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও সংবেদনশীল করপোরেট হাইব্রিড বীজ ব্যবহারের কারণে মাটি হারাচ্ছে উর্বরা শক্তি। চাষ যোগ্যতা হারাচ্ছে জমি। সরকার ‘ভূমি ব্যবহার নীতিমালা-২০০১’ তৈরি করলেও তা আজও আইনে পরিণত করে বাস্তবায়ন করার যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। নেই সুসংহত কোনো নগর পরিকল্পনাও। ফলে জমির অপব্যবহার বাড়ছেই। সব মিলিয়ে দেশে ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের কর্মপরিকল্পনা সফল হবে না, যদি কৃষি জমি রক্ষা করা না যায়। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত না হলে এর নেতিবাচক প্রভাব হবে বহুমুখী। মুনাফামুখী এ যুগে যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিতভাবে দালানকোঠা কিংবা বসতভিটা নির্মাণ ঠেকাতে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। একই সাথে অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে করপোরেট বীজ-সার-কীটনাশকের নির্বিচার ব্যবহার বন্ধ করতে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঠেকাতে সরকারের দূরদর্শী কর্মপরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন দরকার। একই সাথে প্রয়োজন উন্নতনগর পরিকল্পনা। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে আরও শক্তিশালী করে ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে নতুন কৃষি পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে, যা মুনাফার চেয়ে মাটি ও দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখাবে। কৃষি জমি কোনোভাবেই অকৃষি কাজে ব্যবহার করা যাবে না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষণার পরও কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এই অপক্রিয়া রোধে জমি ব্যবহার আইন প্রণয়ন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দাবি।