গাংনীতে নিজ উদ্যোগে অর্ধশত রাস্তা সংস্কার

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনীতে নিজ উদ্যোগে অর্ধশত রাস্তা সংস্কার করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আবুল কালাম আজাদ শান্ত নামের এক যুবক। গেলো দুই বছর ধরে তিনি রাস্তা সংস্কার করছেন। এতে এলাকার মানুষের কাদা রাস্তার সমস্যা লাঘব হয়েছে। একই সাথে সমাজের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতা বিলিয়ে দিচ্ছেন তিনি।
গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নের শানঘাট গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান আবুল কালাম আজাদ শান্ত। তার পিতার নাম হাজি আব্দুল ওয়াদুদ। শান্ত পেশায় ইটভাটা ব্যবসায়ী। তবে ব্যবসার ধরন অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। ব্যবসার পাশাপাশি এলাকার মানুষের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তিনি এখন আলোকিত মানুষ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। গাংনী থানা সড়কের পাশে ধানখোলা মাঠের মধ্যে তার ইটভাটার অবস্থান। এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ওপর দিয়ে পাকা রাস্তা থাকলেও গ্রামের ভেতরের অনেক রাস্তা এখনও কাচা রয়েছে। এসব রাস্তা দিয়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ চলাচল করতে গিয়ে নাজেহাল হতেন। এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘব করতে জালশুকা, খড়মপুর, ধানখোলা, মহিষাখোলা, জুগিন্দা, কষবা, পাকুড়িয়া ও আড়পাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের ভেতরের কাঁচা রাস্তা গেলো কয়েক বছর ধরে সংস্কার করছেন আবুল কালাম আজাদ শান্ত। নিজের ইটভাটা থেকে ইটের আদলা, ডাস্ট এবং কোনো কোনো সময় আস্ত ইট দিয়েই তিনি রাস্তাগুলো সংস্কার করে দিয়েছেন।
জালশুকা গ্রামের কয়েকজন সুবিধাভোগী বলেন, আমাদের গ্রামের ভেতরের একটি রাস্তা বর্ষা হলেই হাটুকাদা হতো। শান্ত ভাই ইট ফেলে দেয়ায় আর কাদা নেই। এখন বর্ষাকালেও আমরা মাঠ থেকে সহজেই ফসল তুলতে পারছি। গ্রামের মানুষ তার ওপর খুবই খুশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু রাস্তা সংস্কারই নয়, এলাকার দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া মানুষের সহায়তা দিয়ে আসছেন এই শান্ত। নিরবে-নিভৃতে অসহায় মানুষকে এগিয়ে নিচ্ছেন নানাভাবে। প্রচার বিমুখ এই মানুষটির সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি প্রচারে বিশ^াসী নয়। ব্যবসাতো করতেই হবে। কিন্তু জনবিছিন্ন হয়ে নয়। এর মধ্য দিয়েই আমি মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। আশেপাশের লোকজন যদি কষ্টেই থাকে তাহলে আমার টাকা থেকে কি হবে?
কন্যা দ্বায়গ্রস্ত পরিবার, টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না, অভাবের সংসারে ছেলেমেয়ের ভর্তি ও বই কেনা হচ্ছে না এমন পরিবারের সদস্যদের খবর পেলেই সেখানে ছুটে যান শান্ত। পরম মমতায় সেই পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়ে সাধ্যমতো সহায়তা করেন। তার সহায়তার মধ্য দিয়ে এলাকার অনেক পরিবার আজ নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন।
শুধু ব্যক্তি কিংবা পরিবারকে সহায়তায় নয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক উন্নয়ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন শান্ত। মানুষের সেবায় জীবনের বাকি সময় কাটিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেন তিনি। তিনি বলেন, একার পক্ষে সবার উন্নয়ন করা যায় না। সেক্ষেত্রে ধানখোলা ইউনিয়নের যে প্রান্তেই হোক অসহায় মানুষের খোঁজ পেলে সহায়তা দেবো। এই ইউনিয়ন ঘিরে আমার বড় পরিকল্পনা রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা ও সার্বিক উন্নয়নের শিক্ষার মানোন্নয়ন, খেলাধুলা বাড়ানোসহ বেশকিছু কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এলাকার মানুষ যদি আমাকে সহযোগিতা করেন তাহলে আরও অনেক কিছুই করতে পারবো।