দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গায় আবাসন প্রকল্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১০ বসতবাড়ি ভস্মিভূত

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর ঘটনাস্থল পরিদর্শন : নগদ অর্থ ও চাল-ডালসহ প্রয়োজনীয় বস্ত্র প্রদান
কার্পাসডাঙ্গা/ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি: দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গায় আবাসন প্রকল্পে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ১০ বসতবাড়িসহ প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালামাল ভস্মিভূত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছে প্রায় ২ ঘন্টা প্রচেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তার আগে আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে হতদরিদ্র ১০টি পরিবারের সবকিছু। কোনো বাড়ি থেকে কেউ কোনো মালামাল বের করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদশীরা। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার সময় এ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকা-ে ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ার ঘরের মালিকগুলো হলো তাহজউদ্দিনের ছেলে আমির হোসেন, মৃত মোছার মেয়ে ছালে, ফেরদৌসের ছেলে আলমগীর, ফেরদৌসের স্ত্রী রেবেকা, ফকির মোহাম্মদের ছেলে মিনাজুল, ইসমাইলের ছেলে নওসাদ, নবিছদ্দিনের ছেলে ফকির মোহাম্মদের, জিয়াউরের মেয়ে মমতাজ, সিদ্দিক মালিতার ছেলে নওসাদ ও ফকির মোহাম্মদের ছেলে ফেরদৌস।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয়রা বলেন, কার্পাসডাঙ্গা ৪ নং আবাসন প্রকল্পের ভৌরভ ছাউনির যেকোনো একটি ঘর থেকে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগে যায়। এরপর মূর্হতের মধ্যে ১০টি ঘরে আগুন ধরে যায়। আবাসন প্রকল্পে আগুন লাগার পর স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে দর্শনা ও চুয়াডাঙ্গার ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে প্রায় দুঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নিয়ণন্ত্রে আসার আগেই সবঘরের আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। কোনো পরিবার কোনো কিছুই বের করতে পারেনি। আবাসন প্রকল্পের পুড়ে যাওয়া ঘরের মালিক ইসমাইলের ছেলে নওসাদের স্ত্রী পলি খাতুন জানান, গত কয়েকদিন আগে স্থানীয় দুটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার তুলেছিলাম সে টাকা ঘরে রাখা ছিলো সে টাকাগুলোও পুড়ে গেছে। আর ঘরে থাকা কোনো মালামাল বের করতে পারিনি। তারা আরও জানান, আমার সব শেষ হয়ে গেছে এখন আমি পথের ভিখারি। পুড়ে যাওয়া ঘরের আরেক মালিক ফকির মোহাম্মদের ছেলে মিনাজুল জানান, আমার ঘরে আসবাবপত্রসহ প্রায় ২ লক্ষ টাকা পরিমাণের গহনা ছিলো সেগুলোও পুড়ে গেছে এবং ঘরে রাখা ২০ হাজার টাকাও পুড়ে গেছে । ফকির মোহাম্মদের ছেলে শাহিন জানান, আমার কালকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে অনার্স ৩য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। পরীক্ষার অ্যাডমিড কার্ড ও রেজিঃ কার্ড পুড়ে গেছে। আমি কিভাবে পরীক্ষা দেবো বুঝতে পারছি না। আরেক ঘরের মালিক আমির হোসেনের স্ত্রী সুমাইয়া জানান, আমার বাবার বাড়ি থেকে কিছু জমি ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে আসি এরপর ৪০ হাজার টাকা দিয়ে আমার ছেলের একটি অটোগাড়ি কিনে দিই আর বাকি টাকা ঘরেই ছিলো। ঘরে থাকা ৪০ হাজার টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফকির মোহাম্মদ নামের একজন জানান, আমার ২টি ছাগল পুড়ে গেছে এবং অনেক টাকার আসবাবপত্রও পুড়ে গেছে। ঘর থেকে একটা গামছা লুঙ্গিও বের করতে পারিনি।
এদিকে আবাসন প্রকল্পে আগুন লাগার পর বিকেল ৫ টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল হাসান ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন। আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি পরিবারের পাশে দাঁড়ান তিনি। এ সময় তিনি প্রত্যেক পরিবারকে নগদ ৫ হাজার টাকা, কম্বল, চাল, ডাল, তেল ও মোমবাতি প্রদান করেন। তিনি আগুনে পুড়ে যাওয়া প্রত্যেক পরিবারকে খুব অল্প সময়ে মধ্যে ঘর তৈরির টিনসহ আনুসাংগিক প্রদান করবেন বলে জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ সময় বলেন, ডিসি স্যারের নির্দেশে আমি এখানে। এ সকল অনুদান তিনিই দেন। ইউএনও আরও বলেন, বিদ্যুত কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারনে প্রায় এরকম ঘটনা ঘটছে। বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে যদি আগুন লাগে তাহলে এর সমাধান তারা করছে না কেনো? তিনি সমাজের সকল পেশাজীবী মানুষদের ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। অনুদান প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন কার্পাসডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগ নেতা খলিলুর রহমান ভুট্ট, ইউপি সদস্য আব্দুল হাকিম।
এদিকে সন্ধ্যা ৭ টার সময় জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ আবাসন প্রকল্পে অগ্নিকা-ে ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়া স্থানে পরিদর্শনে আসেন। পরিদর্শন শেষে তিনি ক্ষয়ক্ষতি পরিবারের সকলের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন। কম্বল বিতরণের সময় তিনি জানান, খুব অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সকলকে নতুন ঘর তৈরি করে দেবেন বলেন জানান। জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ আরও বলেন, যে যেখানে আছি সকলে মিলে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ালে এরা সকলে উপকৃত হবে। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুর রাজ্জাক (সার্বিক), নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ফখরুল ইসলাম, কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ির এসআই আসাদুর রহমান, ইউপি সদস্য আব্দুল হাকিম।