ধর্ষণের অনেক ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়

ধর্ষণ এখন নারীর জীবনে সবচেয়ে বড় আতঙ্ক। ধর্ষণ যেন রোগে পরিণত হয়েছে। একের পর এক ধর্ষণ চলছেই। দুই থেকে ষাট বছরের কোনো নারীই আজ নিরাপদ নয়। তবে কি নারীর জন্য কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে লকার খুলতে হবে? যেভাবে চোর-ডাকাতের ভয়ে স্বর্ণালঙ্কার কিংবা টাকা-পয়সা লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়? হ্যাঁ, নারীর জন্য বোধকরি সে রকমই কোনো ব্যাংকের লকার খোলাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না হলে কে দেবে নারীর নিশ্চিন্তে চলার নিশ্চয়তা? ধর্ষণ বর্তমানে অবিরাম বর্ষণে রূপ নিয়েছে। ক্যান্সার, স্ট্রোক কিংবা হার্টের রোগ নিয়ে মানুষ যতোটা আতঙ্কিত, তার চেয়ে বেশি আতঙ্কিত ধর্ষণ নিয়ে। কারণ ধর্ষণই আজ এসব রোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাদের ঘরে মেয়ে আছে তারা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছেন না। পারছেন না স্কুল-কলেজ, ভার্সিটি, গার্মেন্টস, গৃহকর্মী থেকে শুরু করে দুই বছরের শিশু, এমনকি গৃহকর্মী নারী থেকে বৃদ্ধারা পর্যন্ত।
বিভিন্ন সূত্রের দেয়া তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর ধর্ষণ ঘটনায় করা মামলাগুলোর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ৪ শতাংশ। আর শাস্তি হয় হাজারে ৪ জনের মাত্র। এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। ধর্ষক প্রভাবশালী হওয়ার কারণে সাক্ষীদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। যে কারণে তারা সাক্ষ্য দিতে আসেন না। অনেক সময় চাপের মুখে ভিকটিমও মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন। কোনো কোনো মামলা আপস হয়ে যায়। অর্থ ও প্রভাব খাটিয়ে, মামলার ফাঁকফোকর গলিয়ে অভিযুক্তদের পার পেয়ে যাওয়ার ঘটনা আছে। আছে মেডিকেল রিপোর্টজনিত জটিলতা। এভাবেই বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। ধর্ষকরা থেকে যাচ্ছে প্রায় ধরা ছোঁয়ার বাইরেই। বলা বাহুল্য, ধর্ষণের অনেক ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়; যা ভিকটিমই গোপন রাখেন। আবার প্রকাশিত হওয়ার পরও ভিকটিম মামলায় যেতে চান না। অনেক ক্ষেত্রে মামলা গ্রহণেও পুলিশের গড়িমসি রয়েছে। এই বিচারহীনতার কারণেই ধর্ষকদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে, বাড়ছে ধর্ষণের ঘটনা। এটি এখন নারী নিরাপত্তার বড় হুমকি। নারীর নিরাপত্তাহীনতায় লাভবান হবে সেই অপশক্তি, যারা নারীদের নতুন করে গৃহবন্দি করতে চাইছে। এ ববর্রতা মোকাবেলা করতে হলে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিকল্প নেই। কোনোক্রমেই বিচার বিলম্বিত করা যাবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার করতে হবে। আইনের দুর্বলতাও দূর করতে হবে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন।