প্রতারণামূলক টাকা হাতানোর দায়ে শিক্ষক যখন কারাগারে

একজন শিক্ষক, তাও আবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। তিনি এর নিকট চাকরির লোভ দেখিয়ে তো ওর সুবিধাজনক স্থানে বদলির টোপে টাকা হাতিয়ে বর্তমানে কারাগারে। ঠিক কতোজনের নিকট থেকে এভাবে মোট কতোটাকা হাতিয়েছেন তা নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। তবে তার অর্থাৎ চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শামীম হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত ৪ জনের ৪টি মামলার মধ্যে যে দুটির রায় হয়েছে, ওই দুটিতেই দোষী সাব্যস্ত করে দ-াদেশ দিয়েছেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক। এরপরও কি তার শিক্ষকতা করার সুযোগ থাকা উচিৎ?
শিক্ষকরাই সমাজের আদর্শ। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। শিক্ষকের কর্মকা- কোমলমতি শিক্ষার্থীর সফেদ মগজে যতোটা প্রভাব ফেলে অতোটা প্রভাব পরিবারের বাইরের আর কেউ ফেলতে পারে না। শিক্ষকই বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখায়, শিক্ষকই সুপথে থাকা শেখায়। আর ওই শিক্ষকই যদি প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত হন, আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাভোগ করতে থাকেন তা হলে তাকে আর যাই হোক শিক্ষক বলা যেমন চলে না, তেমনই শিক্ষকতার সুযোগ রাখা মোটেই উচিৎ নয়। শামীম হোসেন সম্পর্কে পত্রিকায় বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার যে ফিরিস্তি উঠে এসেছে তা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের পদস্থ কর্তার কি দৃষ্টিগোচর হয়নি? পত্র পত্রিকা না হয় কর্তা কর্মব্যস্ততার কারণে পড়ার সুযোগ পাননি, যে বিদ্যালয়ে শামীম হোসেনের শিক্ষকতা সেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও কি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করানোর তাগিদ টুকুও অনুভব করেননি। করবেন কীভাবে? বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো কতোটা দুর্বল না হলে একজন সহকারী শিক্ষক বিদ্যালয়ে হাজির থেকেও আদালতে হাজিরা দিয়েছেন ১২ দিন। এও কি সম্ভব?
একের পর এক ব্যক্তির নিকট থেকে নানা প্রলোভনে টাকা নিয়েছেন, পরবর্তীতে টাকা ফেরত দিতে না পেরে চেক দিয়েছেন। চেকের বিপরীতে ব্যাংকে টাকা না পেয়ে প্রতারিতরা মামলা করেছেন। সঙ্গত প্রশ্ন- যারা একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের চাকরি দেয়া বা বদলির ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করেছেন তাদেরকেও কি সচেতন বলা চলে? যদিও পদস্থ এক কর্মকর্তাকে আত্মীয় বলে দাবি করে শামীম একের পর এক ব্যক্তির নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ। অভিযোগকারী আইনের দৃষ্টিতে দোষী হেতু বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বেরই অংশ।