অপরাধী অপরাধ করেও যখন ভয় দেখিয়েই পার পায়

আইন আবেগে চলে না, যদিও সমাজের জন্যই আইন। আইন বিরোধী কাজ করে আতঙ্ক সৃষ্টিকারীর বিরুদ্ধে নিরাপদে সাক্ষ্য দিতে পারবে কি-না তা নিয়ে যে সমাজের সাধারণ মানুষ শঙ্কা প্রকাশ করে। সেই সমাজে সাক্ষ্য প্রদানকারীর নিরাপত্তা নিয়ে আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় কি?
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের গাড়াবাড়িয়া গ্রামে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে একাধিক ব্যক্তির সাথে বিরোধ চিহ্নিত একটি পরিবারের। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী পরিবারের এক সদস্য একের পর এক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটিয়ে চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মামলাও হয়েছে একের পর এক। অপহরণ, তুলে নিয়ে নির্যাতন, ঘরে অগ্নিসংযোগসহ মারপিটের বহু মামলার আসামি শেষ পর্যন্ত আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। প্রকাশ্যেই তার সহযোগীদের সাথে নিয়ে হতদরিদ্র পরিবারের একজনকে নৃশংসভাবে খুনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আত্মসমর্পণের পর পুলিশ দু’দিনের রিমান্ডে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাদে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও দুটি ধারালো অস্ত্র রামদা উদ্ধার করেছে। যদিও খুনে ব্যবহৃত শাবলটি উদ্ধার হয়নি।
যাকে খুন করা হয়েছে তার সন্তানদের মধ্যে একজন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে চিকিৎসাধীন। দিন আনা দিন খাওয়া সেই ছেলে পিতার প্রাণ রক্ষা করতে না পারার কষ্টে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে সংসারে কি চুলা জ্বলে? তাছাড়া ইজিবাইকচালক ছেলের ইজিবাইকটি পিতা খুনের ঘটনার মধ্যেই তা হাতছাড়া হওয়ায় সামনে নেমে আসে অনিশ্চয়তার অন্ধকার। এই যখন শোকার্ত ছেলেদের হালচিত্র, তখন পিতা হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি নিয়ে মিছিল মিটিং ওদের কতোটুকু সান্ত¦না, তা দূর থেকে উপলব্ধি করা সত্যিই কঠিন। দরিদ্র পরিবারের শোকার্ত সদস্যদের মুখে সান্ত¦নার শুকনো বাণীর চেয়ে আর্থিক সহযোগিতাটাই যে ওদের বেশি প্রয়োজন তা বোদ্ধাদের বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়।
সমাজের সকলে ক্ষমতার তোষামোদি নন। ন্যায়ের পক্ষেই অধিকাংশের অবস্থান। তারপরও অন্যায়কারী তথা অপরাধীর ভয়ে জড়সড়ো কেন? অপরাধী অপরাধ করেও যখন ভয় দেখিয়েই পার পায়, তখন কি আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয় না? এই আস্থাহীনতা হয়ে দাঁড়ায় ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায়।