স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে পরিত্যক্ত টয়লেট ও ভবন অপসারণ করতে হবে

চুয়াডাঙ্গা জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল ও কলেজ পর্যায়ে পরিত্যক্ত টয়লেট ও ভবনগুলো ভেঙে অপসারণ করতে হবে। সড়ক সম্প্রসারণের কারণে রাস্তার মধ্য থেকে বিদ্যুত পোল অপসারণ করার জন্য বিদ্যুত বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গতকাল রোববার বেলা ১০টায় জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় এসব মন্তব্য করেছেন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আলহাজ মো. আব্দুর রাজ্জাক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম, জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নুরজাহান খানম, এনএসআই উপ-পরিচালক আবু জাফর ইকবাল, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াশীমুল বারী, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হাসান, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, আলমডাঙ্গা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সীমা শারমিন, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হায়দার, গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আখতার হোসেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক এবিএম রবিউল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র একরামুল হক মুক্তা, জীবননগর পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল ওয়াহেদ, ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল রঞ্জন চক্রবর্তী, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারি পরিচালক আব্দুস সালাম, চুয়াডাঙ্গা সাংবাদিক সমিতির সভাপতি অ্যাড. রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম সনিসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ আরও বলেন, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইসিটি মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময়ে মাইক ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। তবে, ১৬টি শর্ত দিয়ে মাইক ব্যবহার করতে দেয়া হবে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল হাজিরা ও সিসিটিভি লাগাতে হবে। অফিস-আদালত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মাদকরোধে চুল শিল্প কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য আকন্দবাড়িয়ায় চুল শিল্প গড়ে তোলা যেতে পারে। মানুষের সুবিধার জন্য রাস্তার ধারে যাত্রী ছাউনি ও পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। আগামী নভেম্বর মাসে জেলায় ১০ লাখ তালের বীজ রোপন করা হবে। মসজিদে ভিক্ষুকদের ভিক্ষার টাকা দেয়া যাবে না। মসজিদের সামনে ভিক্ষুকদের পূণর্বাসন বাক্সে টাকা দেয়া যাবে। ওই টাকা দিয়ে ভিক্ষুকদের পূণর্বাসন করা হবে। চার উপজেলায় চারটি স্থানে মাছের অভয়াশ্রম বানাতে হবে। ডিসি অফিসের সামনে প্রাণিসম্পদ অফিস খাঁটি দুধ বিক্রির ব্যবস্থা করলে তা ক্রেতা সাধারণ কিনতে পারবেন। ১০টাকা কেজি দরের চাল কোনো মোটর আরোহী যেন না পায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারবে না। ভেজাল সার কেউ জেলায় আনতে ও বিক্রি করতে না পারে সেদিকে কৃষি বিভাগকে তৎপর থাকতে হবে। শহরে সড়ক নির্মাণে ইটের গুণগত মান সঠিক হয় এবং সরকারি ১ ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না। ইম্প্যাক্টের সামনে দীর্ঘদিন রাস্তার কাটা মাটি পড়ে আছে। এগুলো দ্রুত অপসারণ করতে হবে। এজন্য সড়ক বিভাগকে নজরদারি বাড়াতে হবে। যে গাছগুলো জীবনহানি হয় এরকম ডাল কেটে অপসারণ করতে হবে। রেলবাজারে জমি নির্ধারণে যৌথভাবে রেল ও জেলা প্রশাসন একত্রে কাজ করে যেকোনো বাঁধা দূর করবে। স্বাস্থ্যসেবায় দেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা দ্বিতীয় স্থান লাভ করায় স্বাস্থ্য বিভাগকে অভিনন্দন জানাই। একজন রোগীর জন্য ১ জন এটেন্ডেন্ট এধরণের ব্যবস্থা প্রথম পর্যায়ে অসুবিধা মনে হলেও ধীরে ধীরে তা ঠিক হয়ে যাবে। বিষয়টি অবিলম্বে চালু করতে হবে। যেসকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার শর্ত পূরণ করতে পারেনি, তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে। সদর হাসপাতাল রোডকে ওয়ানওয়ে আগামী মার্চের ১ তারিখ থেকে কার্যকর করা হবে। জীবননগরের উথলীতে ১৪ বিঘা সরকারি জমিতে আইসিটি পার্ক এবং আলমডাঙ্গায় সরকারি ৫০ বিঘা জমিতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা যায় কি-না তা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। সরকারি দফতরের বিদ্যুৎবিল, পানির বিল ও জমির খাজনাসহ প্রয়োজনীয় খরচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এখন সংগ্রহ করার সময়। যেসকল সদস্য সভায় অনুপস্থিত থাকেন তাদের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে। কোনো কর্মকর্তা তার মনোনীত প্রতিনিধি সভায় পাঠানো যাবে না। সরকারি প্রকল্পের কাজে সাইনবোর্ড থাকতে হবে।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিকভাবে এখন গরম অবস্থা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকে সেদিকে নজর রয়েছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের বিষয়ে বেশি মামলা হচ্ছে। কেউ যেনো প্রতারকদের হাতে না পড়ে সেদিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুরজাহান খানম বলেন, জীবননগর-চ্যাংখালী রোডে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজ শুরু করেছি। এ বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত মরা গাছ নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, চ্যাংখালী রোডে দোকানের সামনে কেউ কেউ শেড দিয়ে রেখেছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে তা অপসারণ করা হবে।
সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম বলেন, অ্যাটেন্ডেন্ট কার্ড তৈরি হয়েছে। বিতরণ করা হয়নি। হাসপাতাল কমিটির মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। হেলথ সার্ভিসে দেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছে। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা ক্লিনিকের চাবি হস্তান্তর না করায় ওষুধ দেয়ায় সমস্যা হচ্ছে। ক্লিনিকগুলো বিকল্প ব্যবস্থায় ৩দিন চালু রাখা হয়েছে। জেলায় মোট ৮৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে ২৯টির মধ্যে ১৯টির আবেদন জমা পড়েছে। বাকি ১০টির কোনো আবেদন জমা পড়েনি। আবেদনের শেষ সময় ছিলো গত ৩১ জানুয়ারি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, বর্তমানে আমন সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে। এ পর্যন্ত ৮০ ভাগ ধান ক্রয় সম্পন্ন হয়েছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আগামী মার্চ মাস থেকে চালু হবে। নির্ধারিত ডিলারদের মাধ্যমে জেলার ৪৪ হাজার তালিকাভুক্ত দরিদ্র মানুষের মাঝে ১০টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করা হবে।