তথ্য ভাণ্ডার ঝুকিতে পড়ার শঙ্কা দেখে তৎপর ইসি

স্টাফ রিপোর্টার: বিদ্যমান ডেটাবেইজের ধারণ ক্ষমতার সম্পূর্ণ ব্যবহৃত হয়ে যাওয়ায় ও ‘সাপোর্ট সার্ভিস’ আপগ্রেডেড না হওয়ায় দেশের ১০ কোটি ৪১ লাখেরও বেশি ভোটারের তথ্যভাণ্ডার ঝুঁকিতে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার কাজ শুরুর ১০ বছরের মধ্যে এমন সমস্যার মুখোমুখি হল নির্বাচন কমিশন।

এ অবস্থায় তথ্যভাণ্ডার সুরক্ষায় স্টোরেজ ও সার্ভার প্রতিস্থাপন, আপগ্রেডেড ডেটাবেইজ সিস্টেম কেনা, সাপোর্ট সার্ভিস নবায়নসহ জরুরিভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। অর্থসংস্থান দ্রুত করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রীর সাথেও। ডেটাবেইজ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে- স্বীকার করেই জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ বলছে, সুরক্ষার জন্য তারা উদ্যোগীও হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এ অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার সাইদুল ইসলাম বলেন, তথ্যভাণ্ডারের স্টোরেজ ফুল হয়ে যাচ্ছে; তবে সার্ভার এখনও ঝুঁকির মধ্যে পড়েনি। সেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে আমরা ইমার্জেন্সি কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি। এজন্য তিন ধাপে (স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ) কী করতে হবে, তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, ঝুঁকির আগেই তথ্যভাণ্ডার সুরক্ষা করতে এনআইডি স্টোরেজ ও সার্ভার, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কালার প্রিন্টার, আইরিশ ও ফিঙ্গার স্ক্যানার কেনায় অর্থ সংস্থানে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোটার তালিকা ও এনআইডি ডেটাবেইজ হালনাগাদের বিষয়ে ১৪ জানুয়ারি কমিশনকে এনআইডি উইং মহাপরিচালক জানান, ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের সময় নাগরিকদের ডেমোগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহ করা হয়। ২০০৯ সালে প্রায় ৫১৮ উপজেলার ভোটারদের ডেটা একত্রিত করে ওরাকল ডেটাবেইজের মাধ্যমে সেন্ট্রাল ডেটাবেইজ তৈরি করা হয়। ২০১০ সাল থেকে তা ওরাকল এক্সাডেটা মেশিনের মাধ্যমে যাবতীয় ডেটা প্রসেসিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমানে ১০ কোটি ৪১ লাখের বেশি ভোটারের তথ্য ওরাকল এক্সাডেটা মেশিনের মাধ্যমে সংরক্ষিত রয়েছে। ইসির কার্যপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে (বিসিসি) ইসির ওরাকল এক্সাডেটা সিস্টেমের স্টোরেজের স্পেস সম্পূর্ণ ব্যবহৃত হওয়ায় বর্তমানে কোনো নতুন ডেটা সংযোজন করা যাচ্ছে না; পুরাতন ডেটার আপডেটও সম্ভব হচ্ছে না। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনের এক্সাডেটা মেশিনের আটটি ডেটাবেইজ সার্ভারের মধ্যে তিনটি ক্রিটিক্যাল ওয়ার্নিং দিচ্ছে। এছাড়া ১৪টি স্টোরেজ সার্ভারের ফ্লাশ ড্রাইভের মধ্যে ৯টি বিকল হয়ে গেছে। এতে ডেটাবেইজের পারফরমেন্স উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে; যাতে সেবা দেয়া বিঘ্নিত হচ্ছে। এক্সাডেটা মেশিনের কোনো স্পেয়ার পার্টস বর্তমানে মজুদ নেই। এ সিস্টেমের কোনো হার্ডওয়্যার বিকল হয়ে গেলে দেশব্যাপী এনআইডি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এএফআইএস) এর সাপোর্ট সার্ভিস মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ১০ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি ভোটারের তথ্যভাণ্ডারে নতুন করে ১০ আঙুলের ছাপ ও আইরিশ ম্যাচিং বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা। দেশের ৮২টি প্রতিষ্ঠান এনআইডি যাচাই সেবা নিচ্ছে। তথ্যভাণ্ডারের উপর ভিত্তি করে ই-টিআইএন, সিম নিবন্ধন, রেমিটেন্স উত্তোলন, গাড়ি নিবন্ধন, অজ্ঞাত লাশ শনাক্ত করণ, জঙ্গি ও নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি শনাক্তকরণসহ নানা ধরনের নাগরিক সেবা দেয়া হচ্ছে। বিদ্যমান ‘নাজুক’ অবস্থা কাটাতে দ্রুত অর্থবরাদ্দ এবং আপগ্রেডেট ডেটাবেজ সিস্টেম কেনা, ওরাকল এএফআইএস ও বিভিআরএস সাপোর্ট সিস্টেম নবায়নের তাগিদ দিয়েছে এনআইডি উইং। তথ্যভাণ্ডার সুরক্ষার বিষয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারির ইসির কার্যপত্রে বলা হয়েছে, বর্তমানে অত্যন্ত জরুরি সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে নাগরিক তথ্য ভাণ্ডারের নিরাপত্তা, জরুরি সেবা, সংবেদনশীলতা এবং চলমান কার্যক্রমগুলো নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার লক্ষ্যে ডাটা সেন্টার (ডিসি) ও ডিজাস্টার রিকভারিস্টেরেজ (ডিআরএস) এর জন্য ৫০ টেরাবাইটের দুটি স্টোরেজ কেনা যেতে পারে। এছাড়া উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কালার প্রিন্টার, আইরিশ ও ফিঙ্গার স্ক্যানার কেনা প্রয়োজন। এ তিন খাতে সাড়ে ৫ কোটি ব্যয় হতে পারে। তথ্যভাণ্ডারের এ কাজের জন্য ৩০০ কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন হতে পারে। ডেটাবেজ প্রতিস্থাপন ও সাপোর্ট সার্ভিস কেনায় তিন ধাপে এ খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হচ্ছে স্বল্প মেয়াদে প্রায় ১৩৫ কোটি, মধ্য মেয়াদে ১৫৩ কোটি ও দীর্ঘ মেয়াদে ৭৩ কোটি টাকা; যা প্রকল্প থেকে সংস্থান করা হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায় সিইসি কেএম নূরুল হুদা, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক সাইদুল ইসলাম গত রোববার অর্থমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, অর্থমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে আমরা আসন্ন বাজেটে কমিশনের সম্ভাব্য বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা করেছি। সেই সাথে প্রকল্পের জন্য ৩০০ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেছি। অনুবিভাগকে মহাপরিচালক বলেন, জরুরি কিছু যন্ত্রপাতি কেনাকাটার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন অনুমোদন দিয়েছে। আশা করছি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে দ্রুত যন্ত্রপাতি কেনা যাবে। নিরবচ্ছিন্ন সেবা চালু রাখতে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।