চুয়াডাঙ্গায় আমের মুকুলে কৃষকের আগামী স্বপ্ন দোল খাচ্ছে : বাতাসে ভাসছে মন মাতানো ঘ্রাণ

?

নজরুল ইসলাম: ঝড়ের দিনে মামার দেশে, আম কুড়াতে সুখ, পাকা জামের মধুর রসে, রঙিন করি মুখ। পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের ‘মামার বাড়ি’ কবিতার পঙ্গোক্তিগুলো বাস্তব রূপ পেতে বাকি রয়েছে আর মাত্র কয়েক মাস। তবে সুখের ঘ্রাণ বইতে শুরু করেছে। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এ মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। ফাল্গুনি হাওয়ায় থোকায় থোকায় দুলছে আমের মুকুল। শীতের শেষে আম গাছের কচি ডগা ভেদ করে সবুজ পাতার ফাঁকে হলদেটে মুকুল গুচ্ছ যেনো উঁকি দিয়ে হাসছে। বাগানের সুনসান নীরবতা চিরে একটানা গান শোনাচ্ছে মৌমাছি। মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মৌমাছির গুনগুন শব্দে মুখরিত আম বাগান। যে গন্ধ মানুষের মন ও প্রাণকে বিমোহিত করে তুলেছে। শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্র আমগাছ তার মুকুল নিয়ে হলদে রঙ ধারণ করে সেজেছে এক অপরূপ সাজে। কয়েক দিনের মধ্যে আমের মুকুল পরিণত হবে এক পরিপূর্ণ দানায়। আমের মুকুলে কৃষকের আগামীর স্বপ্ন দোল খাচ্ছে। সেই সোনালি স্বপ্নকে বুকে ধারণ করেই বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত চুয়াডাঙ্গার আম বাগান চাষিরা।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু সময় অনেকটা পাল্টে গেছে। এখন এ তালিকায় চুয়াডাঙ্গা জেলা নিজের স্থান করে নিয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে নানা জাতের আম। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই আম চাষের জমি বাড়ছে। জেলার আম বাগান বা ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা প্রায় প্রতিটি গাছেই কম-বেশি মুকুল ধরেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬-১৭ অর্থবছরে জেলাতে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছিলো। যেখান থেকে আম উৎপাদন হয় ১ লাখ ৯২ হাজার মে.টন। এ বছর আমের আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৯২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৯২ হেক্টর জমিতে বেশি আমের আবাদ হয়েছে। যেখান থেকে আম উৎপাদন হবে প্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার মে.টন আম। জেলাতে আ¤্রপালি, লেংড়া, ফজলি, হাড়িভাঙা, মল্লিকা, থাই, গোপালভোগ, বারি ১০, দেশি, বেনারসি সিতাভোগ ইত্যাদি জাতের আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সিংহভাগই আ¤্রপালি।
এ বিষয়ে কথা হয় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের ছোটসলুয়া গ্রামের আম চাষি মাসুদ রানার সাথে। তিনি বলেন, এবছর আমার আম গাছে প্রচুর পরিমাণে মুকুল ধরেছে। এখন পর্যন্ত আমের মুকুলে কোনো রোগ-বালাই আক্রমণ করেনি। আবহাওয়াও ভালো। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে আশা করছি প্রতিটি আম গাছেই পর্যাপ্ত পরিমাণে আম ধরবে। গত বছর সাড়ে ১৬ বিঘা জমিতে আমের বাগান ছিলো। যা বিক্রি করেছিলাম সাড়ে ৭ লাখ টাকায়। এবছর ২৫ বিঘা আমের বাগান আছে। এলাকাতে ফসলি চাষের জমি রেখে অনেকেই আম বাগান করেছে। কুন্দিপুরের আম চাষি নুরুজ্জামান জানান, মূলত আমগাছের পরিচর্যা শুরু হয় আম শেষ হওয়ার সাথে সাথে। গাছের পুরাতন বোটা ভেঙে ফেলা। বাগানে চাষ সেচ দেয়া। পাতা পরিষ্কার রাখা। মুকুল আসার আগে এবং পরে ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক নাঈম আস সাকীব মাথাভাঙ্গাকে বলেন, জেলায় এ বছর আমের উৎপাদন ভালো হবে। কারণ এ বছর আমের মুকুল ধরার সময় প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ এখন পর্যন্ত দেখা দেয়নি। এমনকি তেমন কোনো রোগ-বালাইও হয়নি। অন্যান্য বছরের তুলনায় বাড়তি সতর্কতাও আছে আমাদের। যদি প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হয় তাহলে কৃষকরা বাম্পার ফলন পাবেন বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, আম চাষে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। যার কারণে অনেকই এ পেশায় এগিয়ে আসছেন। বর্তমানে জেলাতে আবাদি জমিতে আমের চাষ করা হচ্ছে। আমরা চাষে কৃষকদের বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিচ্ছি। আমাদের মাঠ পর্যায়ে অফিসাররা কাজ করছেন।