গাংনীতে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সনদ নিয়ে প্যারামেডিকেল প্রশিক্ষণ প্রতারণা

বিটিএফ অফিস সিলগালা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত
গাংনী প্রতিনিধি: সমাজসেবা অধিদফতর থেকে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সনদ নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন ‘প্যারামেডিকেল ও নার্সিং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’। বাংলাদেশ টেকনোলজি ফাউন্ডেশন (বিটিএফ) নামের ওই স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান মেহেরপুর গাংনীতে প্যারামেডিকেল ও নাসিং প্রশিক্ষণের নামে এলাকার শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক লাখ টাকা। অবশ্য বাধ সেধেছে প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা হয়েছে। গাংনী সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ার হোসেন ওই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই বিটিএফ নামের ওই সংস্থা প্যারামেডিকেল ও নাসিং প্রশিক্ষণ কোর্স চালিয়ে যাচ্ছিলো। জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের নির্দেশনার আলোকে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় গাংনী ঈদগাহ পাড়ায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির কাউকে পাওয়া যায়নি। সিলগালা করা কক্ষে প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র ও আসবাবপত্র রয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দুঃখের অথৈ সাগরে পড়েছেন সেখানে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা। প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তাদেরকে ভর্তি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাংনী ঈদগাহ পাড়ার একটি বাড়িতে দু’কক্ষ ভাড়া নিয়ে বছরখানেক আগে থেকে শুরু হয় বিটিএফ’র কার্যক্রম। এলাকার বিভিন্ন বয়সী ছেলেমেয়েদের চাকরি ও পল্লী চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণে টানা হয়। নির্দিষ্ট অর্থ জমা দিয়ে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী ছয় মাস ও এক বছর মেয়াদী কোর্সে ভর্তি হয়। সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। চুয়াডাঙ্গার সাজ্জাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি বিটিএফ গাংনী থানার ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ঈদগাহ পাড়ার ওই বাড়ির সামনে দেয়া সাইনবোর্ডে বাংলাদেশ টেকনোলজি ফাউন্ডেশন (বিটিএফ) গভঃ রেজিঃ নং ১৪১ লেখা রয়েছে। এছাড়াও কদমতলা সাতক্ষীরা প্রধান কার্যালয় এবং ফার্মগেট ঢাকার ঠিকানা দিয়ে ঢাকা শাখা অফিস হিসেবে দাবি করা হয়েছে।
জানা গেছে, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন মেডিকেল অফিসার বিটিএফ এ প্রশিক্ষক হিসেবে মাঝে মধ্যে দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকারের একজন প্রথম শ্রেণির চাকুরে হয়ে কিভাবে তারা ওই প্রতারণার প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত হলেন তা নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। প্রশিক্ষণ সম্মানিভাতা নিয়ে কেনো মেডিকেল অফিসারবৃন্দ ওই প্রতিষ্ঠানের অবৈধকাজে সহায়তা দিলেন সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরার জনৈক এক ব্যক্তি সমাজসেবা কার্যালয় থেকে বিটিএফ নামে স্বেচ্ছাসেবী (এনজিও) প্রতিষ্ঠানের সনদ গ্রহণ করে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় বিটিএফ’র শাখা খুলেছেন। স্থানীয় কিছু মানুষকে অর্থের লোভ দেখিয়ে প্যারামেডিকেল ও নাসিং প্রশিক্ষণ ইনস্টিউটের নাম ভাঙিয়ে প্রশিক্ষণ কাজে নামিয়ে দেন। মূলত সমাজসেবা অধিদফতরের সনদপত্র নিয়ে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করা যায়। ওই সনদের অধীনে কোনোভাবেই প্যারামেডিকেল ও নার্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া যায়না বলে সমাজ সেবা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে বিটিএফ গাংনী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত চুয়াডাঙ্গার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমি এর আদ্যপ্রান্ত কিছুই জানি না। আমি সামান্য কিছু বেতনে সেখানে চাকরি করি। যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের অর্থ ফেরত দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে সদুত্তোর দিতে ব্যর্থ হন সাজ্জাদ হোসেন।