হোমিও দোকানে আগুন : দোকানিকে ধরে পুলিশে দিলেন পাশের ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী সাধারণ

চুয়াডাঙ্গা স্টেশনের পাশে চাল-গমের দোকানি আব্দুল মজিদ একদিন সেজে বসেন ডাক্তার : পিতার অবর্তমানে ছেলেও শুরু করেন ডাক্তারি
স্টাফ রিপোর্টার: আগুনের শিখা ভয়ানক হওয়ার আগেই দ্রুত নির্বাপকের পদক্ষেপ নেয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে চুয়াডাঙ্গা গমপট্টি-চালপট্টির প্রায় অর্ধশত দোকান। পাশাপাশি দোকানের সারিতে থাকা একটি হোমিওপ্যাথি ডাক্তারখানার চাল দিয়ে ধোয়া নির্গত হচ্ছে দেখে পাশের বস্তা বিক্রেতা দ্রুত দমকলে খবর দেয়ার পাশাপাশি পাশের দোকানিদের জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, আগুনের শিখা লেলিহান হওয়ার আগেই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পানি দিয়ে আগুন নেভান। পরে ওই হোমিওপ্যাথি ডাক্তারখানার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আব্দুল মজিদের ছেলে সেখানে পৌঁছুলে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা তাকে ধরে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে। পুলিশ তাকে পাকড়াও করে থানায় নিয়ে গারদে রাখে। তবে গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে তেমন কেউ মামলা করেননি। ফলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে ঠিক কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায় তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলো। পৈত্রিকভাবে হোমিওপ্যাথি চেম্বার পেয়ে শফিকুল নিজেকে ডাক্তার হিসেবেই পরিচয় দেয়। তেমন একটা রোগীর ভিড় না থাকলেও হোমিও ডাক্তারখানা মাঝে মাঝে নিয়ম মতোই খোলা হয়। তবে হঠাৎ করে কয়েকদিন ধরে বন্ধ রাখারও নজির রয়েছে। শফিকুল চুয়াডাঙ্গা ঈদগাপাড়া হকপাড়ার বাসিন্দা।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের চুয়াডাঙ্গা স্টেশনের অদূরেই গমপট্টি-চালপট্টি। নান্টুরাজ সিনেমাহলের সামনের সারিতে চাল ও বস্তার দোকানের পাশাপাশি রয়েছে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসালয়। স্থানীয়রা বলেছেন, গাড়াবাড়িয়া বাগানপাড়ার আব্দুল মজিদও চাল-গমের ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে খানেকটা হঠাৎ করেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সেজে বসে তার চাউলের দোকানটিকে ডাক্তারখানায় রূপান্তর করেন। নাম দেন মজিদ হোমিও হল। ১২-১৩ বছর আগে মজিদ মারা গেলে তার এক ছেলে স্টেশন সড়কের এক প্রান্তে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শুরু করেন। আর পৈত্রিক চেম্বারে চিকিৎসক সেজে বসেন ছোট ছেলে শফিকুল ইসলাম। আনুমানিক ৩২-৩৫ বছর বয়সী শফিকুল ইসলাম মাঝে মাঝে রহস্যজনক আচরণ করে। নেশাখোর? নাকি মস্তিষ্ক বিকৃত? তাকে নিয়ে এসব প্রশ্নও তোলেন পাশের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ। গতকাল বুধবার বেলা আনুমানিক আড়াইটার দিকে শফিকুল ইসলাম তার পৈত্রিক চেম্বারে বসে ছিলো। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সে তার পাদুকা আগুন দিয়ে পোড়ায়। পাশের বস্তা ব্যবসায়ী এ তথ্য দিয়ে বলেন, আনুমানিক পৌনে ৪টার দিকে যখন দেখি ওই হোমিওপ্যাথি দোকানের চালা দিয়ে ধুয়া বের হচ্ছে দেখে দ্রুত সকলকে জানানোর চেষ্টা করি। প্রকাশ্যে পাদুকা পোড়ানোর পর দোকানের ভেতরে আগুন জ্বলছে দেখে অনেকেরই সন্দেহ হয়, ওই শরিফুলই দোকানে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তালা মেরে সরে পড়েছে। ভাগ্যিস, আগুন ভয়াবহ রূপ নেয়ার আগেই নেভানো সম্ভব হয়েছে। অন্যথায় বড় সর্বনাশ হয়ে যেতো। অনেকেরই বসতে হতো পথে।
আগুন নেভানোর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে তখন বিকেল পৌনে ৫টা। এ সময় সেখানে হাজির হয় শফিকুল। স্থানীয় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা তাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এ সময় সে রহস্যজনক আচরণ করতে লাগলে তাকে বাঁধা হয় রশি দিয়ে। শেষ পর্যন্ত খবর দেয়া হয় পুলিশে। সদর থানার পুলিশ তাকে ঘটনাস্থল থেকে ধরে থানা কাস্টডিতে নেয়। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাকে সদর থানাতেই রাখা ছিলো। তবে অগ্নিকা-ের খবর পেয়ে দুটি গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর পর ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার প্রাথমিকভাবে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, বৈদ্যুতিক সটসার্কিট থেকে আগুন ধরতে পারে। কোনো কিছুতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার তেমন আলামত তাৎক্ষণিকভাবে নজরে পড়েনি। তাছাড়া এরকম অভিযোগ উত্থাপিত হলে তা তদন্ত করতে হবে। কারণ বন্ধ ঘরের আগুন নেভানোটাই আমাদের প্রথমে প্রধান উদ্দেশ্য থাকে, এক্ষেত্রেও তাই ছিলো।