আন্তঃজেলা ডাকাতদলের সদস্য ইমরান গ্রেফতার : অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার

আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের পশুহাট এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী সফল অভিযান

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আগ্নেয়াস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলার অপরাধ জগতের নটরাজ ইমরান আহমেদ। গত বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ তাকে পশুহাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ রেলস্টেশনের গোডাউনের পেছনের জঙ্গল থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১ রাউন্ড গুলিসহ একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করে। ইমরান আহমেদ (২৪) উঠতি বয়সি ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী ও আন্তঃজেলা ডাকাতদলের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী হিসেবে পরিচিত। ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অস্ত্র, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ তার নামে থানায় ১১টির অধিক মামলা রয়েছে।

পুলিশসূত্রে জানা গেছে, আন্তঃজেলা ডাকাতদলের অন্যতম নেতা ইমরান আহমেদ। ইমরান আলমডাঙ্গা বৈদ্যনাথপুরের সাবেক পুলিশ কনস্টেবল মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আলমডাঙ্গা শহরের মসজিদপাড়ায় বসবাস করতেন। গত ২০১১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৭০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করার পর আলমডাঙ্গা শহর পরিত্যাগ করে। পরে আর কখনই নিয়োমিতভাবে আলমডাঙ্গা শহরে বসবাস করেনি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ তাকে শহরের পশুহাট এলাকা থেকে গ্র্রেফতার করে। আটকের পর তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ রাতেই আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের গোডাউনের পেছনের জঙ্গলে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১ রাউন্ড গুলিসহ একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করে।

পুলিশ জানিয়েছেন, মোটর সাইকেল ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, অস্ত্র ও বিষ্ফোরক মামলাসহ আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা, মিরপুর, গাংনী থানা ও কুষ্টিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে বহু মামলা রয়েছে। শুধু চুয়াডাঙ্গা নয়, তাদের অপরাধ সংগঠনের ক্ষেত্র বৃহত্তর কুষ্টিয়াজুড়ে। শুধুমাত্র আলমডাঙ্গা থানায় তার বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে। বিষ্ফোরক আইনে ১টি, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ২টি, ডাকাতি মামলা ২টি, মারামারি মামলা ১টি ও অস্ত্র আইনে ২টি মামলা।  সে ইতঃপূর্বে ইভটিজিং মামলায় ৯ মাসের জেল খেটেছে। তার নামে ২০১৪ সালে দুটি চুরি মামলা, ২০১৫ সালে একটি চুরি ও মারামারি মামলা এবং ২০১৬ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা রুজু হয়। গত দেড় বছর পূর্বেও নীল রঙের পালসার মোটরসাইকেল নিয়ে কখনও ফাঁড়ি পুলিশ, কখনও থানা পুলিশ আবার কখনও ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গাসহ এর আশপাশ এলাকায় একের পর এক মোবাইলফোন ও মোটরসাইকেল ছিনতাই করে আসছিলো বলেও ওয়াকিবহাল মহলের দাবি। এছাড়া, গতবছর ১ ফেব্রুয়ারি দামুড়হুদার দেউলি গ্রামের সামসুল আলম বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারসূত্রে জানা যায়, দামুড়হুদা পাইলট হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র দেউলি গ্রামের সামসুল আলমের ছেলে সাইমুনসহ তার দু’বন্ধু জাবেদ ইকবাল ও শিহাব গত ১৮ জানুয়ারি স্কুল শেষে বিকেল ৪টার দিকে বাড়ি ফিরছিলো। পথিমধ্যে দেউলি প্রাইমারি স্কুলের সামনে নীল-কালো রঙের একটি পালসার মোটরসাইকেলযোগে ইমরান ও তমাল নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে বলে, তোরা মোবাইলফোনে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করিস। তোদের এখন ডিবি অফিসে যেতে হবে। সে সময় ডিবির এসআই পরিচয়দানকারী ইমরান তাদের ইভটিজিং মামলায় ফাঁসানোর ভয়-ভীতি দেখায় এবং ওই ছাত্রের কাছে থাকা মোবাইলফোন ৩টি হাতিয়ে নিয়ে ডিবি অফিসে দেখা করার কথা বলে দ্রুত সটকে পড়ে। পরে থানা ও ডিবি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা ভুয়া পুলিশ। এ বিষয়ে ছাত্র সাইমুন ওইদিনই দামুড়হুদা থানায় একটি জিডি করেন। দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই ফিরোজ জিডির সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করেন এবং মোবাইলফোন ট্র্যাকিং এবং কললিস্ট চেক করে তাদেরকে শনাক্ত করেন। এরপর দামুড়হুদা মডেল থানার তৎকালীন ওসি আবু জিহাদের নেতৃত্বে আলমডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবশেষে গাংনী থেকে তমালসহ এই ইমরানকে গ্রেফতার করে। ইমরানের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত তমাল । গোপালগঞ্জ জেলার হাটবাড়িয়া গ্রামের এসআই বদরুজ্জামান ওরফে বি জামানের ছেলে তমাল। ১০-১১ বছর পূর্বে আলমডাঙ্গা থানায় চাকরি করতেন বি জামান। থাকতেন সপরিবারে আলমডাঙ্গাতেই। সেই থেকে ইমরানের সাথে তমালের বন্ধুত্বের সূচনা। এছাড়া জয়রামপুর স্টেশনের অদূরে পুলিশ পরিচয়ে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে দুই কিশোরের কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল ছিনতাই করেছিলো।

আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ খান জানান, গ্রেফতারকৃত ইমরান বৃহত্তর কুষ্টিয়ার আন্তঃজেলা ডাকাতদলের নেতা। ইমরান আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি ছিলো। তার বিরুদ্ধে ৩টা গ্রেফতারি ওয়ারেন্ট মুলতবি ছিলো। সেজন্য ইমরান খুব সাবধানে অপরাধ ও চলাচল করতো।