বর্ষায় কাদা আর গ্রীস্মে ধূলিকণা : প্রতিকার চাই ভুক্তভোগী মহল

চুয়াডাঙ্গায় অপরিকল্পিতভাবে রাস্তার ধারে গড়ে উঠেছে অধিকাংশ ইটভাটা

নজরুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন জায়গায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। বিশেষ করে রাস্তার কোল ঘেষে গড়ে ওঠা ইটভাটার কারণে বর্ষাকালে কাদা আর গ্রীস্মকালে ধুলিকণায় নাস্তা নাবুদ হতে হয় পথচারীদের। ফলে ধুলাজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যদিও অবকাঠামো এবং নির্মাণ কাজে ইট একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু। তবে সবকিছুর মূলে রয়েছে নিজে সুস্থ থাকা এবং অপরকে সুস্থ রাখা। এ থেকে প্রতিকার চেয়ে ইটভাটা মালিকদের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগী মহল।

চুয়াডাঙ্গায় চলতি বছর ইট পোড়ানো হচ্ছে ৮৭ ইটভাটাতে। এর মধ্যে লাইসেন্স প্রাপ্ত ইটভাটা ২৬টি, আর লাইসেন্স বিহীন ৬১টি। অধিকাংশ ইটভাটাগুলোই গড়ে উঠেছে আবাদযোগ্য জমি এবং পাকা-কাচা রাস্তার কোল ঘেষে। আর এসব ভাটাগুলোতে জমির ওপরই ভাগের মাটি কেটে নিজস্ব পরিবহনযোগে ভাটায় আনা হয়। এ সময় পরিবহনের ট্রলির ওপর থেকে মাটি-কাদা রাস্তার ওপর পড়ে। প্রতিদিন রাস্তার ওপর এসব কাদা মাটি পড়ে রাস্তার ওপর আলগা ধূলার জন্ম হয়। রাস্তার ধারে গড়ে ওঠা ইটভাটার সামনে দিয়ে পথচারীরা পথ চলতে গিয়ে চোখ মুখ চেপে ধরে চলে। অনেক সময় ধুলা বালুর পরিমাণ এতো বেশি থাকে যে সেখান থেকে কোনোভাবেই নিজেকে রক্ষা করা যায় না। পড়ে থাকা মাটি থেকে সৃষ্টি হয় ধুলা। আবার সামান্য বৃষ্টি হলে ওই ধুলা কাদায় পরিণত হয়ে পাকা রাস্তার ওপর এতো পিচ্ছিল হয় যে পথ চলাচল করাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। সে সব কাদা থেকে সাময়িক রক্ষা পেতে ভাটা মালিকরা ইটের গুড়া এবং বালু ছিটিয়ে সাময়িক সমাধান করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে রোদে শুকালে ওই সমস্ত ইটের গুড়া এবং বালুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করলে ধুলার পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

তাই স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে অচিরেই বায়ু দূষণের উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে। পানি, বিদ্যুত, রাস্তা তৈরিতে খোঁড়াখুঁড়ির সময় শহরের পরিবেশ যেমন দূষিত হয় ঠিক তেমনি রাস্তার ধারে গড়ে ওঠা ইটভাটার ভারি ধুলিকণায় গ্রাম অঞ্চলের পরিবেশ দূষিত হয়ে থাকে। উভয় ক্ষেত্রে যাতে বায়ু দূষণ না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি রাখতে হবে। বায়ু দূষণ রোধে এলাকাভিত্তিক করণীয় নির্ধারণ জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে,  বায়ু দূষণের কারণে অন্যান্য সময়ের চেয়ে গ্রীস্ম মরসুমে শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বেড়ে যায়। এ সময় শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে ভর্তি হওয়া বেশির ভাগ রোগীই থাকে শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। এছাড়াও ধুলাবালুর কারণে শরীরের অনেক ক্ষতিই হয়ে থাকে। মাথা থেকে শুরু করে শরীরের ভেতর পর্যন্তও ধূলাবালুর কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ধুলাবালুর কারণে মাথার চুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়, মাথায় খুশকির প্রধান কারণই হলো ধুলাবালু। তাছাড়াও মাথার ভেতরের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের কারণও এ ধুলাবালু। এর সাথে মিশে থাকা রোগ জীবাণু। ধুলাবালুর কারণে মুখের ত্বকের অনেক ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে। ধুলাবালু শরীরে পড়ার কারণে আমাদের লোমকূপ (লোমের গোড়ায় যে ছিদ্র থাকে যা দিয়ে ঘাম বের হয়) গুলো বন্ধ হয়ে যায়। আর এসবের কারণে আমাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের পচড়ার সৃষ্টি হয়। ধুলাবালু কারো কারো এ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট ও এলার্জির অন্যতম প্রধান কারণ। আবার নিঃশ্বাসের সাথে ধুলা ভেতরে গিয়ে ফুসফুসে অনেক রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। পথচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইট একটি অতি প্রয়োজনীয় বস্তু এটা যেমন ঠিক তেমনি প্রত্যেকের কাছে তার নিজের শারীরিক সুস্থতা তার চেয়েও মূল্যবান। ইটভাটা মালিকেরা একটু সচেতন হলে ধুলাবালুর এ সমস্যা থেকে আমরা কিছুটা হলেও রক্ষা পেতে পারি।

এদিকে গত বছর ২২ জুলাই চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ জেলার ইটভাটা মালিকদের ডেকে ভাটা তৈরি এবং ইট পোড়ানো আইন-কানুন সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেন। আইন মেনে ভাটা করলে সার্বিক সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেন। পাশাপাশি রাস্তার ইটভাটার মাটি রাস্তায় পড়া, রাস্তার কোল ঘেষে ইট স্তূপ করে চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভাটা মালিকদের স্মরণ করিয়ে দেন।