বাংলাদেশের প্রেমে ২৭ বছর ধরে সেবা দিচ্ছেন ব্রিটিশ নাগরিক জিলিয়ান

 দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর হাসপতালে নার্সিং সেবা দিচ্ছেন জিলিয়ান এম রোজ নামের এক ব্রিটিশ নাগরিক। সেবা দিতে গিয়ে এদেশের মানুষের সাথে গড়ে উঠেছে আত্মার সখ্যতা। আজীবন কুমারী এই নার্স হাসপাতালের রোগী ও প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ। বাকি জীবন বাংলাদেশের মানুষের সেবা করে কাটিয়ে দেয়ার আশাও করেন তিনি।

জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি এদেশে আসেন। পরে পেশা বদল করে ১৯৮১ সালে নার্স হিসেবে মুজিবনগরের নিভৃত পল্লি বল্লভপুর হাসপাতালে যোগদান করেন। ১৯৮৬ সালে মায়ের সেবা করার লক্ষ্যে দেশে ফিরে গেলেও ১৯৯৬ সালে আবারও ফিরে আসেন বাংলাদেশে। চার্চ অব বাংলাদেশ পরিচালিত বল্লভপুর হাসপাতালে তখন থেকে অদ্যবধি নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে সেবা নিতে আসা রোগীদের সাথে জিলিয়ান রোজের একপ্রকার সখ্যতা গড়ে উঠেছে। মায়ের মমতা মাখা হাত দিয়ে চব্বিশ ঘন্টা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সেবা করতে গিয়েই এলাকার মানুষের হৃদয়ে এক অন্যরকম জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। এলাকার রোগী সাধারণ মানুষ জিলিয়ানকে খুবই আপনজন হিসেবে দেখেন। ব্রিটিশ সরকারের পেনশনে চলে রোজের এক সদস্য বিশিষ্ট সংসার। হাসপাতাল থেকে কোনো বেতন নেন না।

অপরদিকে, বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও নিজের থেকে কিছু অর্থ দিয়ে হাসপাতালের দরিদ্র রোগীদের সেবা দেন তিনি। তাইতো ভিনদেশি এই মহিয়সী নারীর মমত্বগাঁথা চিকিৎসা সেবায় অভিভূত এলাকাবাসী। জীবনের বাকি সময় এদেশের মানুষের সাথেই কাটানোর আগ্রহ প্রকাশ করলেন জুলিয়ান এম রোজ।

জানা গেছে, ১৯৩৯ সালে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ অঞ্চলে মধ্যবিত্ত ব্রিটিশ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জিলিয়ান এম রোজ। তার পিতা সিএ রোজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ আর্মিতে ছিলেন। রোজের ছোটবেলায় তিনি মারা যান। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়েই ছিলো রোজের মায়ের সংসার। ১৯৯৬ সালে মা মারা যান। ইংল্যান্ডে জিলিয়ানের একমাত্র ভাই ডক্টর ডিএ রোজ ও তার পরিবারের বসবাস। তার এই সেবার কার্যক্রমে পরিবারের লোকজনও সন্তুষ্ট বলে জানান রোজ।

জিলিয়ান এম রোজ বলেন, সেবাই হচ্ছে পরম ধর্ম। সেবার মধ্য দিয়ে ঈশ^রকে পাওয়া যায়। সরকার যদি আমাকে দ্বৈত নাগরিকত্ব দেয়, তাহলে আমার সম্মান বাড়বে। আমি যতোদিন বেঁচে থাকবো ততোদিন এভাবে সেবা দিয়ে যাবো। সেবা দিতে আমার ভালো লাগে। পৃথিবীতে এসেছি সেবা দিতে। বৃদ্ধাদের জন্য কেউ কিছু করে না। তাই আমি নিজে একটি বৃদ্ধাশ্রম খুলেছি। তারা যেনো ভালোভাবে মৃত্যুবরণ করতে পারে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য শংকর বিশ্বাস বলেন, বল্লভপুর হাসপাতালে নিজের প্রচেষ্টায় স্থাপন করেছেন স্পেশাল বেবি কেয়ার ইউনিট। ফলে বিভিন্ন এলাকার শিশুরা কম খরচে এখানে সেবা পাচ্ছে। অপরদিকে, রোজের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে একটি বৃদ্ধাশ্রম। সেখানে বসবাসকারী বৃদ্ধদের দেখাশোনাও করেন রোজ। হাসপাতালের সাথে নাসিং প্রশিক্ষণ ইন্সিটিউটের মধ্য দিয়ে এলাকার দরিদ্র মেয়েরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছেন অনেক অসহায় পরিবারের মেয়েরা। জুলিয়ান রোজ একটি আদর্শ। তার মতো করেই সেবা দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন নার্সিং প্রশিক্ষণের ছাত্রীরা। নাসিং ছাত্রী মেরি মন্ডল ও শিলা বলেন, আমাদেরকে মায়ের মমতা দিয়েই কাজ শেখান তিনি। তার মতোই জীবন গড়তে চায় আমরা।