স্কুলে নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ

মানুষ নৈতিকতা বোধসম্পন্ন প্রাণী। এই বোধটি যখন ব্যক্তির চরিত্র থেকে হারিয়ে যায়, তখন তাকে অমানুষ বলে সাব্যস্ত করা হয়। পরিতাপের বিষয় হলো, বর্তমানে আমরা এক চরম নৈতিক অবক্ষয়ের মধ্যে অবস্থান করছি। সমাজের চারপাশের ঘটমান অনৈতিকতা যে ক্ষত সৃষ্টি করছে, তা নানা অনিয়মের সংক্রমণের জন্য দায়ী। এ অবস্থায় নীতিনৈতিকতা ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সুবোধসম্পন্ন মানুষ তাড়না বোধ করছেন। গত মঙ্গলবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনারকক্ষে শিক্ষার গুণগতমান এবং টেকসই উন্নয়নে নৈতিক শিক্ষাশীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় দেশের বিশিষ্টজনদের কণ্ঠে এর প্রতিফলন লক্ষ্য করা গেছে। অনুষ্ঠানটির আয়োজক সেন্টার ফর এথিক্স এডুকেশন (সিইই)সভায় বক্তারা নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ হয়ে উঠতে পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেন। তারা এই সতর্কতা তুলে ধরেন যে, নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ না হলে সমাজ ও দেশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়।
এটা স্বতঃসিদ্ধ, পরিবার থেকে সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে একটি শিশু ছোটকাল থেকে নীতিবোধসম্পন্ন মানুষ হয়ে ওঠে। তবে পরিবারের পাশাপাশি শিশুদের নীতিনৈতিকতা শেখাতে হবে স্কুল থেকে। কারণ পরিবারের বাইরে বড় একটি সময় শিশুরা স্কুলে কাটায়। আর ছোটকালে নৈতিকতাবোধ শিশুদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করানো সম্ভব হলে ভবিষ্যতে তা রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়। শিশু বেড়ে ওঠে আত্মপ্রত্যয়ী ও আলোর যাত্রী হয়ে। তাই নৈতিকতা শিক্ষার মহান দায়িত্ব অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও নিতে হবে। কারণ নৈতিকতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সততা, মহত্ত্ব, ন্যায়পরায়ণতা ও আদর্শবাদিতা।

অন্যদিকে লোভলালসা, সীমাহীন উচ্চাভিলাষ, বিবেচনাহীন জৈবিক কামনা মানুষকে অসৎ পথে পরিচালিত করে। নৈতিকতা বোধসম্পন্ন মানুষ গড়ে তুলতে পরিবার ও স্কুলের ভূমিকা তাৎপর্যমণ্ডিত। তবে এটি একটি সামগ্রিক ব্যাপারও। যারা দেশ ও সমাজ পরিচালনা করে এবং প্রাতিষ্ঠানিক কর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা যদি নৈতিকতাসম্পন্ন না হন, তাহলে বিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা শিক্ষা দিয়ে সুফল আশা করা যাবে কি? সিইইর পরিচালক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান যথার্থই বলেছেন, সব নৈতিকতার মূলে রয়েছে আইনের শাসন। আইনের শাসনের অনুপস্থিতিতে কিছুই টেকসই হয় না। আবার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের ক্ষেত্রেও নৈতিকতা একটি চালিকাশক্তি। এ অবস্থায় নৈতিকতাসম্পন্ন সমাজ প্রতিষ্ঠায় সব পক্ষের কঠোর প্রত্যয় জরুরি। প্রাথমিকে নৈতিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি এ উদ্দেশে সক্রিয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত কর্মপন্থা আবশ্যক।