অন্যায় করে প্রশ্রয় পেলে অন্যায় প্রবণতা পেয়ে বসে

কতোটা দুঃসাহস না হলে চলমান রেলগাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে টিকেট চেকারকে বেদম মারপিট করা যায়? উঠতি বয়সী যুবক দলের এ দুঃসাহস দেখেও কি বলতে হবে, রেলগাড়িতে যাত্রীদের ন্যূনতম নিরাপত্তা আছে? যদিও দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে উদাহরণ করে গোটা ব্যবস্থাকেই দোষারোপ করা যায় না। তারপরও চলন্ত রেলগাড়ি থেকে একের পর এক ছিনতাইয়ের পর যখন রেলগাড়ির একজন কর্মীকেই নামিয়ে নিয়ে মারপিটের ঘটনা দৃশ্যমান হয় তাখন নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী স্টেশন থেকে ১০-১২ জনের একদল যুবক নি¤œগামী তথা খুলনাগামী মহানন্দা এক্সপ্রেসে উঠে যখন টিকেট চেকারের সামনে পড়ে তখন তারা নিজেদেরকে ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। কোনো ছাত্রেরই কি বিনাটিকেটে রেলভ্রমণের সুযোগ আছে? তারপরও টিকেট চেকার ছাত্রত্বের পরিচয় দেখতে না চেয়ে মুখের কথা বিশ্বাস করেই অর্ধমাসুলে রেলভ্রমণের সুযোগ দিতে চান। এ সুযোগ নেয়া দূরের কথা যখন উল্টো আচরণ করে তখন তাদের কোটচাঁদপুর স্টেশনে নামিয়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে নিয়ে আইনে সোপর্দের কথা বলা হয়। সেখান থেকে ওই যুবকদল মুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরে। পরদিন গতপরশু শুক্রবার বিকেলে ঊর্ধ্বগামী তথা রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জগামী মহানন্দা নামক রেলগাড়িতে ওই যুবকদলের কয়েকজন উথলী স্টেশনে অবস্থান নেয়। ওই টিকেট চেকারকে চলন্ত রেলগাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যখন মারধর শুরু করে, তখন দৃষ্টিপড়ে রেলগাড়িটি পরিচালকের তথা গার্ডের। তিনি দ্রুত রেলগাড়ি থামানোর সংকেত দেন। গাড়ি থামতে রেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে নিযুক্তরা নন, যাত্রী সাধারণই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তারা গাড়ি থেকে নেমে হামলাকারীদের ধাওয়া করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে হামলাকারী যুবকদল পালিয়ে বাঁচে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরে সমাজের সামনে যে প্রশ্নটি তুলে ধরা হয়েছে তা হলো- উঠতি বয়সী ওই যুবকদের ঔদ্ধত্য ও রেলের নিরাপত্তাহীনতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, বাংলাদেশ রেলওয়ে বর্তমান সরকারের আমলে বেশ উন্নতি করেছে। তাছাড়া এক সময়ের সময় নির্ঘণ্ট গুলিয়ে ফেলা রেলওয়ে এখন সময়সূচির ব্যাপারেও বেশ সচেতন। দূরপাল্লার রেলগাড়ির নির্ধারিত আসনের এখন এতোটাই চাহিদা যে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি কালোবাজারি শুরু করেছে। দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতিগ্রস্থতাকে রাতারাতি সুস্থতায় ফেরানো কিছুটা কঠিন হলেও তা যে অসম্ভব নয়, তা রেলমন্ত্রীর অগ্রযাত্রা স্পষ্ট করে দেয়। সামগ্রিক বিবেচনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের অগ্রযাত্রাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। এর মাঝে কিছু ঘটনা বাংলাদেশ রেলওয়ের নিরাপত্তাহীনতা এবং কিছু ব্যক্তির দুর্নীতিসহ বিনামাসুলে রেলভ্রমণের হীনমানসিকতারই সাক্ষ্য দেয়। ছাত্রের ছাত্রত্ব দাবি করে অনিয়ম করার মানসিকতা পরিহার করতে অবশ্যই শিক্ষাদানে শিক্ষককেই আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। কেন না, শিক্ষকই তো ওই ছাত্রকে মানুষ করার দায়িত্বে নিয়োজিত। তাছাড়া অভিভাবকদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে, যে দায়িত্বশীলতা সন্তানকে হিং¯্র হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। উথলীর যে যুবকদল রেলগাড়িতে উঠে ছাত্রত্ব দাবি করে অনিয়ম প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলিয়েছে ওরাও আমাদেরই সন্তান। ওদের সচেতন করতে না পারার দায়ভার আমরা তথা সমাজ এড়াতে পারে না। সামাজিকভাবেও প্রজন্মকে সুপথে রাখার দায়িত্ব সমাজের সচেতনমহলের ওপরও কম বর্তায় না। তা না হলে কোনো সমাজ শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে উন্নয়নের শেখরে, কোন সমাজ অনিয়মকে প্রশ্রয় দিয়ে তলানিতে কেনো?
অবশ্যই অনিয়মকে শক্ত হাতে রুখতে হবে। কোনো ছাত্র-ছাত্রী তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসার পথে রেলগাড়ির প্রয়োজন হলে অবশ্যই হ্রাসকৃতমূল্যে সেই সুযোগ পাওয়ার দাবি রাখে। উথলী থেকে বারোবাজারের উদ্দেশে মহানন্দায় ওঠা ওই যুবকদল যারা নিজেদের ছাত্র বলে পরিচয় দিয়ে ন্যূনতম দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় নেয়া দরকার। অন্যায় করে প্রশ্রয় পেলে অন্যায় প্রবণতা পেয়ে বসে। যার খেসারত সমাজকেই দিতে হয়।