শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তা ও অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা কাম্য নয়

পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। সব ধরনের পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁস রোধে এখন পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েই নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকদের দুশ্চিন্তাও কম নয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে চলতি বছরের শেষ নাগাদ পরীক্ষায় বসবে প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী। কিন্তু সে পরীক্ষায় এমসিকিউ বা বহু নির্বাচনী প্রশ্ন থাকবে কি না, বছরের প্রথম আড়াই মাসেও সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রশ্ন এবং নম্বর বণ্টনের বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়নি। শিক্ষকদের কাছে কোনো গাইডলাইন নেই। ফলে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।

সম্প্রতি শেষ হওয়া এসএসসি পরীক্ষার প্রায় প্রতিটি বিষয় ও পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্নপত্রের রচনামূলক অংশের প্রশ্ন ফাঁস না হলেও এমসিকিউ বা বহু নির্বাচনী প্রশ্ন প্রায় সব পরীক্ষার আগে বাইরে পাওয়া যায়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েও প্রশ্ন ফাঁস করা হয়। এ অবস্থায় এসব পরীক্ষা থেকে এমসিকিউ উঠিয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা শুরু হয়। ওদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও পিইসি পরীক্ষা থেকে এমসিকিউ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা যায়। এমসিকিউ বাদ দেয়ার পাশাপাশি আরও কয়েকটি পরিবর্তন আসতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না যাওয়ায় শিক্ষকরাও দ্বিধায় আছেন। এখন থেকেই সন্তানদের পরীক্ষার জন্য তৈরি করতে শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা। কিন্তু এমসিকিউ থাকবে কি না- এই প্রশ্নের জবাব এখন পর্যন্ত কারো কাছে নেই। একই দোলাচলে জেএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো সুযোগ নেই। এ বছরের শেষে যারা পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা দেবে, তাদের প্রস্তুতি বছরের প্রথমার্ধ থেকেই শুরু হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার্থীরা দুই বছর ধরে একই বই পড়ে আসছে। একই ধরনের প্রশ্নপত্রের সমাধান করে তারা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ অবস্থায় চলতি বছরের শেষার্ধে বা আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তন কতোটা যৌক্তিক হবে, তা ভেবে দেখা দরকার। প্রশ্ন ফাঁস রোধ করতে হবে। তবে সেজন্য পরীক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ দেয়া যাবে না। কাজেই প্রশ্নপত্রের ধরন নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে কথা বলে একটি সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে। প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ভাবার আগে বিদ্যমান শিক্ষানীতিটিও আরেকবার পড়ে দেখা যেতে পারে। পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত যদি নিতেই হয়, তাহলে তা শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই করা ভালো বলে আমরা মনে করি।