উন্নয়নশীল দেশের পথে যাত্রা শুরু

স্বাধীনতার মাসে বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় পৌছে গেলো স্বাধীনতা লাভের ৪৭ বছর পর উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতার স্বীকৃতি দিলো জাতিসংঘ। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে আসার স্বীকৃতি পেলফলে জাতিসংঘের বিবেচনায় উন্নয়নশীল দেশের পথে যাত্রা শুর করল বাংলাদেশ। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) উন্নয়নবিষয়ক কমিটি (সিডিপি) বাংলাদেশকে এ যোগ্যতা নিশ্চিত করেছে। জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনকে অচিরেই এই স্বীকৃতির চিঠি দেবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে কোনো দেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। যে ধাপগুলো বাংলাদেশকেও অনুসরণ করতে হবে। আমরা আশা করছি বাংলাদেশ তা পারবে। কারণ বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনাময় একটি দেশ। এই সম্ভাবনার পূর্ণাঙ্গতা পাবে বা পুরোপুরি বাস্তবায় ঘটবে তার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রচেষ্টা, নারীর অধিকার সংরক্ষণ, মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক অবক্ষয় রোধ এবং দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলাসহ সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকাশ ও প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করার মধ্য দিয়ে। দারিদ্র্যদূরীকরণ ও দেশ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছেছে তখন এদেশের পক্ষে অনেক কিছুই সম্ভব।

একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, বেড়েছে শিক্ষা ও সচেতনতার হার। আভ্যন্তরীণ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কার্যক্রম, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি যেমন, ভিজিডি, ভিজিএফ, জিআর, ওএমএস, টেস্ট রিলিফ, কাবিখা ইত্যাদি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার, বাংলাদেশের অনন্য অর্জন। গ্রামীণ এলাকায় সড়ক ও জনপথের ব্যাপক উন্নয়ন এবং সংযুক্তি, গ্রামীণ অকৃষি কর্মসংস্থান, প্রবাসী আয় অব্যাহতভাবে বাড়া ও ব্যাপক বিদ্যুতায়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণেই দেশের এই সাফল্য এসেছে। যে করেই হোক এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে।

এ কথা সত্য, স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ পুনর্গঠনে অনেক বেগ পেতে হয়। স্বাধীনতার পরপরই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে দেশ। ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুর হয় একটি স্বাধীন দেশের। এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে তিরস্কার করেছিল বিশ্বের অনেক দেশই। যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল তলাবিহীন ঝুড়ি। আর এখন স্বাধীনতার ৪৭ বছরে বাংলাদেশ আর তলাবিহীন ঝুড়ি নেই। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। খোদ বিদেশি অতিথি, বিশ্বব্যাংক প্রধান ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়করাই বাংলাদেশের গুণকীর্তন করছেন। কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশ হচ্ছে এশিয়ার বাঘ। বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্য অর্জন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অভাব হাহাকার আর চোখে পড়ে না। আগামীতে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যেতে হবে। গণতন্ত্রের জয়ধ্বনি করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নানা সংকট আর সীমাবদ্ধতার মধ্যে, দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে পায়ে পায়ে অনেক পথ পেরিয়ে এসেছি আমরা। আমাদের স্বপ্ন ছিল, এ দেশের মানুষ যাতে না খেয়ে কষ্ট না পায়, আমাদের দেশের মানুষ যাতে অশিক্ষিত না থাকে তার ব্যবস্থা করা। আমরা ধীরে ধীরে সেদিকে অগ্রসর হচ্ছি। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এই আশাবাদ দেশের সচেতন মানুষের। আমাদের ২০৪১ সালের মধ্যে দাঁড়াতে হবে উন্নত দেশের কাতারে।