কুষ্টিয়ায় এসএসসি পরীক্ষায় ১৮ শিক্ষার্থীসহ ৯ শিক্ষককে বহিষ্কার নিয়ে বিতর্ক

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: সদ্য শেষ হওয়া এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন কুষ্টিয়ায় ১৮ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ওএমআর শিটে ‘ভুল’ সেট কোড পূরণের অভিযোগে তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়।
বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের সেট কোড জালিয়াতির সুযোগ নেই। তারা ভুল করলে তা সংশোধন করেই উত্তরপত্রে স্বাক্ষর করেন হলে দায়িত্বরত শিক্ষকরা। এরপরও অবশ্য পূরণীয় কোনো বিষয় অসম্পূর্ণ বা ভুল থাকলে ফলাফল স্থগিত রাখে শিক্ষাবোর্ড। তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দাবি করছেন, বিধি মেনেই তিনি অভিযুক্তদের বহিষ্কার করেছেন।
সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রসায়ন বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা চলাকালীন মিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৩ কক্ষ থেকে ১৮ শিক্ষার্থীর খাতা কেড়ে নেয়া হয়। পরে সেট কোড জালিয়াতির দায়ে তাদেরকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।
এ ব্যাপারে মিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব সোহেল আফরোজ ও সহকারী কেন্দ্র সচিব আহাদ আলী বলেন, ১৮ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার সম্পূর্ণরূপে অবৈধ প্রক্রিয়া এবং ক্ষমতার দাপটে করা হয়েছে। সেখানে যা কিছু হয়েছে, তার সবই বিধিবহির্ভূত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তার পিয়নকে দিয়ে পরীক্ষার্থীদের খাতা নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত অশোভন বলে বর্ণনা করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্র পরিদর্শক মিরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, যা কিছু করেছেন, সবই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (পরীক্ষার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বপালনকারী) নিজের সিদ্ধান্তে করেছেন। তিনি দাবি করেন, সেট কোড জালিয়াতির সুযোগ কোনো শিক্ষার্থীর নেই। আর পরীক্ষা কক্ষে কোনো অফিস পিয়ন প্রবেশ করে পরীক্ষার্থীর খাতা জব্দ করতে পারেন না।
তবে কোনো ভুল করেননি বলে দাবি করেছেন মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএস জামাল আহমেদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দেয়া প্রশ্নপত্রের নির্ধারিত সেট কোড পূরণ না করে ওএমআর শিটে অন্য সেট কোড বসিয়ে জালিয়াতি করেছে বলে দৃশ্যমান হওয়ায় ওই কেন্দ্রের তিনটি কক্ষ থেকে ১৮ শিক্ষার্থী ও ৯ শিক্ষককে পাবলিক পরীক্ষা বিধি অনুযায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। পিয়নকে দিয়ে পরীক্ষার্থীর খাতা জব্দের বিষয়টি অস্বীকার করে ইউএনও বলেন, খাতা জব্দের কাজ তিনি ও শিক্ষা অফিসার দুজন মিলেই করেছেন।
পরীক্ষার খাতা নেয়ার অভিযোগ স্বীকার করে পিয়ন সেলিম বলেন, আমি পরীক্ষার কেন্দ্রের মধ্যে থেকে ৩-৪টি খাতা নিয়েছিলাম। ইউএনও স্যার নিয়েছিলা ২টা আর উপজেলা শিক্ষা অফিসার নিয়েছিলাম ১২টা খাতা।
সেট কোড জালিয়াতির দায়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বহিষ্কারের কথা শুনলেও এ বিতর্ক সম্পর্কে কিছু জানেন না উল্লেখ করে কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত কিছু জানি না। তবে বিষয়টি নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠেছে, তখন তদন্ত করে দেখা যেতে পারে প্রকৃতপক্ষে কী হয়েছিলো।
এ ব্যাপারে যশোর শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) রাকিবুল ইসলাম জানান, যদি কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষা সেট কোড পূরণ না করে কিংবা ভুল বৃত্ত ভরাট করে তাহলে তাকে আবেদন করতে হবে। এছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নিয়ন্ত্রণ কমিটি ছাড়া সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ। সেই সাথে প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে কেন্দ্রে কেন্দ্রে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবেন না কেন্দ্র সচিব। আর পরীক্ষা কক্ষে কোনো পিয়ন তো যেতেই পারবে না। তিনি আরও বলেন, পরীক্ষায় জালিয়াতি ও অসাদুউপায় অবলম্বন করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক জহির রায়হান জানান, আপনি মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করুন। তাছাড়া কোনো পিয়ন পরীক্ষার হলে ঢোকার কোনো অনুমতি নেই। যদি ঢুকে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকসহ সচেতন নাগরিকরা।