চুয়াডাঙ্গার পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক ও মেহেরপুর গাংনীর সন্তান সাহজাহান কবিরকে কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করার ঘটনায় মামলা : স্থানীয় কাউন্সিলরসহ আটক ৫

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক ও মেহেরপুর গাংনীর সন্তান সাহজাহান কবিরকে কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করার ঘটনায় স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মোস্তাকিম রহমানসহ ৫জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গেফতার করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার দুপুরে বগুড়া জেলা পুলিশ প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে। এদিকে সাহজাহান কবিরের অবস্থায় আগের থেকে উন্নতি হয়েছে।
জানা গেছে, মেহেরপুর গাংনীর বানিয়াপুকুর গ্রামের জোয়াদ আলীর ছেলে সাহজাহান কবির। তিনি চুয়াডাঙ্গা পাসপোর্ট অফিসের সাবেক সহকারী পরিচলাক ছিলেন। সর্বশেষ তিনি বগুড়া পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় তাকে একদল যুবক কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। সন্ধ্যায় তাকে হেলিকপ্টারযোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিকে, সহকারী পরিচালক সাহজাহান কবিরকে কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা ঘটনায় প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে। গতকাল শুক্রবার সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, সহকারী পরিচালকের শারীরিক অবস্থা বর্তমানে আগের থেকে উন্নতির দিকে।
এদিকে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূইয়া তার কনফারেন্স রুমে গতকাল শুক্রবার দুপুরে এক প্রেসব্রিফিং করেছে। এসময় তিনি জানান চুয়াডাঙ্গার পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক, মেহেরপুর গাংনীর সন্তান ও বগুড়া পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাহজাহান কবিরকে কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করার ঘটনায় পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী শাজেনুর আলম বাদী হয়ে শাজাহানপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। গত বৃহস্পতিবার দায়েরকৃত মামলায় স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ১১জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত নামা ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়। তারপর বৃহস্পতিবার রাতেই জেলা পুলিশের কয়েকটি টিম শহরের এবং আশেপাশের জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে। এসময় তারা শহরের মাল গ্রামের রমজান আলীর ছেলে হাসান আলী, ঠনঠনিয়া হিন্দুপাড়ার আব্দুল কাদেরের ছেলে জীবন, একই এলাকার মৃত আবু তালেবের ছেলে রাসেল মিয়াকে গ্রেফতার এবং ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট সন্দেহে মিলু নামের যুবককে আটক করা হয়েছে। এছাড়াও গতকাল শুক্রবার সকাল পৌঁনে ৯টার দিকে পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকা ডাঙ্গাপাড়ার সাতকুড়ি বাজার থেকে মোস্তাকিম রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি যুবলীগ শহর কমিটির দফতর সম্পাদক ও বগুড়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তাকিম রহমানের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় ২০১২ সালে হত্যা, একই বছরের ২৩ এপ্রিলে অস্ত্র আইনে, মারপিট ও ২০১১ সালে চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বগুড়া পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজাহান কবিরের ওপর হামলা ঘটনার সাথে মোস্তাকিম রহমানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাজাহান কবির বাড়ি যাওয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে ইজিবাইকযোগে শহরতলীর শাকপালা যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে কৈগাড়ি এলাকায় বিভাগীয় বন অফিসের সামনে মোটরসাইকেলযোগে একদল দুর্বৃত্ত তার ইজিবাইকের গতিরোধ করেন। তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে রামদা দিয়ে ডান পায়ে কোপ পারে। এসময় তিনি ইজিবাইক থেকে নেমে দৌঁড়ে বন অফিসের ভেতরে একটি কক্ষে ঢুকে দরজা আটকীয়ে দেন। দুর্বৃত্তরা ওই কক্ষের দরজা ভেঙ্গে তাকে বের করে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। ঘটনার পর পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী শাজেনুর আলম বাদী হয়ে শাজাহানপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১১জন নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।