দামুড়হুদায় ১৯ শিশু শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড়

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ সারাদেশে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ ২০১৮ শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে। দামুড়হুদায় কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেয়ে ১৯ জন শিশু শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা ও স্বাস্থ্য বিভাগের আয়োজনে গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা রিজিয়া খাতুন প্রভাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সপ্তাহব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম। আরও উপস্থিত ছিলেন ১নং প্যানেল মেয়র একরামুল হক মুক্তা, পৌর কাউন্সিলর মুন্সী রেজাউল করীম খোকন, সিরাজুল ইসলাম মনি, নাজরীন পারভীন মলি, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর শেফালী খাতুন, শাহীনা আক্তার, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা কুল প্রমুখ।
বেগমপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হিজলগাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১ হাজার ছেলে-মেয়েকে বিনামূল্যে একটি করে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাইফুল আজম মিন্টু, প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন স্বপন, সহ-প্রধান শিক্ষক আলী হোসেনসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।
দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেয়ে ১৯ শিশু শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে এলাকার গুটি কয়েক ব্যক্তি। শিক্ষকসহ স্বাস্থ্য কর্মীদের লাঞ্ছিত করারও চেষ্টা করেছে তারা। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার জন্য খবর দেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসে । দামুড়হুদা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে অসুুস্থ শিক্ষার্থীদের নেয়া হয় দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হাসান এবং দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল শুভ। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসা হিসেবে দেয়া হয় স্যালাইন ও গ্যাসের ইনজেকশন। চিকিৎসা শেষে সকল শিক্ষার্থীই সুস্থ হয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে গেছে। তারা সকলেই বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্প কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল শুভ। গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার জয়রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর বিদ্যালয়ের ১৯ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে।
জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রন সপ্তাহের ২য় দিন অর্থাৎ গতকাল সোমবার উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে জয়রামপুর বটতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীকে একটি করে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। এর কিছুক্ষন পর জয়রামপুর বারুইপাড়ার সাঈদের মেয়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী তাজমিরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে দ্রুত চিৎলা হাসপাতালে নেয়া হয়। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। এরপর পর্যায়ক্রমে একইপাড়ার হানিফের মেয়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী পাপিয়া, হযরত আলীর মেয়ে ২য় শ্রেণির ছাত্রী হানিফা, নূর মোহাম্মদের ছেলে ৫ম শ্রেণির ছাত্র ইমরান, গোলজার হোসেনের মেয়ে ১ম শ্রেণির ছাত্রী মুনিয়া, ছানোয়ারের ছেলে ৫ম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির, মুনতাজুলের ২ মেয়ে ২য় শ্রেণির ছাত্রী চাঁদনী ও ৫ম শ্রেণির ছাত্রী মুন্নি, বাবলুর মেয়ে ২য় শ্রেণির ছাত্রী ইসতেকা আক্তার এশা, চৌধুরীপাড়ার আসমত আলীর ছেলে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র আতিকুর, দিঘিরপাড়ার মজিবারের মেয়ে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী মোহনা, ডাক্তারপাড়ার শাহিনের মেয়ে ২য় শ্রেণির ছাত্রী হালিমাতুস সাদিয়া, একইপাড়ার সাগরের মেয়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী মিতু, ছানোয়ারের মেয়ে ২য় শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া, বাবর আলীর ছেলে ১ম শ্রেণির ছাত্র সামিদুল, মল্লিকপাড়ার সিরাজুল ইসলামের মেয়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী শিউলী, একইপাড়ার জমাত আলীর মেয়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া এবং শেখপাড়ার আনিসুর রহমানের মেয়ে ৫ম শেণির ছাত্রী খুশি এই ১৯ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছুটি ঘোষণা করা হয় স্কুল। অসুস্থ শিশু শিক্ষার্থীদের ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে করে নেয়া হয় চিৎলা হাসপাতালে। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়িতে করেও কয়েকজনকে নেয়া হয় হাসপাতালে।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল শুভ জানান, অসুস্থ শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিকভাবে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। চিকিৎসা হিসেবে দেয়া হয় স্যালাইন ও গ্যাসের ইনজেকশন। চিকিৎসা শেষে সকল শিক্ষার্থীই সুস্থ হয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যায়। তারা সকলেই বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত। তিনি আরও জানান, খালি পেটে না খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কয়েক শিক্ষার্থী খালি পেটে খাওয়ার কারণেই মূলত এ ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। অনেক শিশু শিক্ষার্থীর আতঙ্কেও অসুস্থ হয়ে পড়ে। এটাকে গণহিস্টোরিয়া বলা হয়ে থাকে। এক শিক্ষক বলেছেন, অসুস্থ ১৯ জনের মধ্যে ৩ শিক্ষার্থী ট্যাবলেটই খায়নি। অথচ তাদের মাথায়ও পানি ঢালা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে জানতে চাইলে প্রথম অসুস্থ হয়ে পড়া তাজমিরা, সুমাইয়া, চাঁদনী, সাদিয়া এবং সামিদুল এরা বাড়ি থেকে না খেয়েই স্কুলে এসেছিলো বলে এ প্রতিবেদককে জানায়। এখন প্রশ্ন হলো, স্কুল থেকে সকল শিক্ষার্থীকেই বলে দেয়া হয়েছে তোমাদের কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হবে। তোমরা সকলেই বাড়ি থেকে খেয়ে আসবে। তাছাড়া এটাতো নতুন কোনো কর্মসূচি নয়। দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে এই কর্মসূচি। তাহলে শিশুদের প্রতি আমাদের এই অনীহা কেনো। কবে ভাঙবে আমাদের কুম্ভঘুম। স্কুলের সামনের চা দোকানি রহমতুল্লাহ বলেছেন, শুধু শিশুদের বললেই হবে না। এলাকায় মাইকিং করতে হবে। কয়েকজন বলেছেন, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে। কোথাও কোনো অঘটন ঘটলো না। তাছাড়া অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল তাপমাত্রাও ছিলো অনেকটাই কম। অসুস্থ ১৯ জনের মধ্যে ৯ জনের বাড়ি বারুইপাড়ায়।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে শহরের বড়বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এসময় মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী রওশন নাহার, বড়বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাজেদা খাতুন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এবারের কর্মসূচিতে জেলার মোট ৮শ’ ২০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৮ শিক্ষার্থীকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হবে। যার মধ্যে সদর উপজেলার ২শ’ ৩০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪৮ হাজার, গাংনী উপজেলার ৪শ’ ৩৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮০ হাজার ৭৮৬ জন, মুজিবনগর উপজেলার ১শ’ ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৭ হাজার ৭২৫ ও মেহেরপুর পৌরসভার ৪৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৩ হাজার ৫২৭ শিক্ষার্থী রয়েছে।
মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার সকালে মুজিবনগর স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের আয়াজনে, মুজিবনগর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তার উপস্থিত থেকে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এইচএম আনোয়রুল ইসলাম, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান, প্রধান শিক্ষক গোলাম ফারুক ও উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুল হাই। স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এইচএম আনোয়রুল ইসলাম বলেন, মুজিবনগর উপজেলায় বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৩ হাজার ৩শ’ ৯০জন ৫ থেকে ১৬ বৎসর পর্যন্ত সকল শিশুদের কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হবে।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহের উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে সদর উপজেলার বিষয়খালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাইয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ। এসময় সিভিল সার্জন ডা. রাশেদা সুলতানা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী ইসলাম, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হাসান, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পার্থসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। জেলায় আগামী ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩’শ এবং ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭শ’ শিশুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হবে।