ওষুধ খাচ্ছেন না খালেদা জিয়া, ভিডিও কনফারেন্সে হাজিরা চায় দুদক

অনলাইন ডেস্কে: কারাগারে বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ হলেও ওষুধ খাচ্ছেন না। এ কারণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে তার হাজিরার ব্যবস্থা করতে প্রস্তাব জানিয়েছে দুদক। বৃহস্পতিবার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানিতে এ কথা জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান এ সময় দুদক আইনজীবীর বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। পরে শুনানির জন্য ২২ এপ্রিল নতুন তারিখ নির্ধারণ করে বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ ওই দিন পর্যন্ত বর্ধিত করেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ মার্চ এ মামলায় খালেদা জিয়াকে পরবর্তী শুনানির দিন ২৮ ও ২৯ মার্চ হাজিরের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। তবে ওই সময়ে কারাকর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে হাজির করতে পারেনি। এ কারণে আজ শুনানির নতুন দিন নির্ধারণ করা হয়। বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, আমি জেনেছি- খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি বাতজনিত সমস্যায় ভুগছেন। মেডিকেল বোর্ড উনাকে চিকিৎসা দিয়েছে, কিন্তু উনি এ চিকিৎসা না নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা নেবেন বলে জানিয়েছেন। সেটি প্রক্রিয়াধীন। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাজির করে আদালতের কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী সেই সুযোগ রয়েছে। ভারতের বিহার রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের দুটি মামলা পরিচালনার উদাহরণ আদালতের সামনে তুলে ধরে মোশাররফ হোসেন কাজল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের কাজ চালিয়ে যাওয়ার আবেদন করা হবে বলেও জানান।

এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান এ সময় কাজলের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, এই আদালত সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী চলে। আদালত কীভাবে চলবে সে জন্য আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ প্রয়োজন। আবদুর রেজাক খান বলেন, এমন সাবমিশন গ্রহণ হতে পারে না। ভিডিও কনফারেন্স… এটি সেটি… এত বাড়াবাড়ি করার কি আছে! তখন দুদকের আইনজীবী বলেন, উনি গুরুতর অসুস্থ না। আমার কাছে তথ্য আছে, মেডিকেল বোর্ড তাকে ওষুধ দিয়েছে, তিনি বাতজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তিনি ওষুধ খাচ্ছেন না। এর পর আবদুর রেজাক খান খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ এক মাস বাড়ানোর আবেদন করলে বিচারক মামলার নতুন দিন নির্ধারণ করে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত জামিনের আদেশ দেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

এর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু হয়। খালেদা জিয়া ছাড়া মামলায় অপর আসামিরা হলেন- তার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন সহকারী একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। মামলায় হারিছ চৌধুরী পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। আর অপর দুই আসামি জামিনে আছেন।

প্রসঙ্গত চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেকের ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করে রায় ঘোষণা করেন আদালত। এর পর খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।