আবারও আলোচনায় জঙ্গি তৎপরতা

দেড় যুগ আগে আত্মঘাতী বোমা হামলার মধ্যদিয়ে দেশে জঙ্গিবাদ দৃশ্যমান হয়। শুরুর দিকে পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে, রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে, ময়মনসিংহে সিনেমাহলে বোমা হামলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। এর কিছুদিন পর উত্থান ঘটে ‘বাংলা ভাই’ নামের এক জঙ্গি নেতার। ২০০৫ সালের ১৪ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা করে নিজেদের অস্তিত্ব জানিয়ে দেয়। কিছুদিন স্তিমিত থাকার পর জঙ্গি কার্যক্রম নতুন করে শুরু হয় ২০১৩ সালে। এবার ব্যক্তিবিশেষকে টার্গেট করে হামলা শুরু হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হয়। এরপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযানে জঙ্গিদের কার্যক্রম কিছুদিনের জন্য থেমে থাকলেও এখন আবার নতুন করে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছে তারা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও নতুন করে জঙ্গিরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। নতুন করে সংগঠিত হতে গিয়ে ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার সঙ্গেও জড়িয়েছে জঙ্গিরা। গত বছর ১৫ আগস্ট ঘিরে বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পরিকল্পনাও ছিলো তাদের। জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশসহ (জেএমবি) নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলো আবারও তৎপর। সবচেয়ে বেশি তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে জেএমবির। রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার আগে থেকেই নব্য জেএমবিকে নতুন করে চাঙ্গা করার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি আস্তানা পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহও করা হচ্ছিল। সম্প্রতি দুই জঙ্গি নেতাকে গ্রেফতারের পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমন তথ্য পেয়েছে। ওদিকে নব্য জেএমবির এক নারী সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লালমনিরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে, যার বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতারের এসব ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে আপাতত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও থেমে নেই জঙ্গি সংগঠনগুলো। ভেতরে ভেতরে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। এসব জঙ্গি সংগঠনের পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকাও অস্বাভাবিক নয়। দেড় যুগ আগে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায়ই জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল। কাজেই নতুন করে সমন্বিত ও সর্বাত্মক অভিযানের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনের বছরে নতুন করে জঙ্গি হামলার আশঙ্কাও অমূলক নয়।